এমবিবিএস না পড়েই ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আসছেন। ফিটাও কম নয়, একজন রোগীর কাছ থেকে নেন ৫০০ টাকা। রামপুরার উলন রোডে একটি ফার্মেসিতে চেম্বারে বসে দুই বছর ধরে চিকিৎসার নামে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। এইচএসসি পাস করা এই প্রতারকের নাম আব্দুল কাইয়ুম (৪০)। সোমবার র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এই ভুয়া চিকিৎসককে আটক করে ২ বছরের জেল দিয়েছেন। আর ফার্মেসির মালিক মোখলেচুর রহমানকে দেয়া হয়েছে এক বছরের জেল।
উভয়কে এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুম সাইন বোর্ডে নিজেকে যৌন, চর্ম, শিশু, মহিলা ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দেন এবং বিভিন্ন অ্যালোপ্যাথি ডিগ্রি যুক্ত করেন। কাইয়ুম জানান, তিনি বিভিন্ন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মুখস্থ করে এবং কতগুলো ওষুধের নাম লিখে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেন।
এর আগে তিনি কিছুদিন ইউনানী বিষয়েও চিকিৎসার নামে প্রতারণা করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থানার উজানচরে। তার বাবার নাম আবদুল জলিল (মৃত)। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা জানান, পশ্চিম রামপুরার উলন রোডের ৩৩৪/৩, হিরোসাকি ফার্মেসিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ডা. স্বপন কুমার দফাদার উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানে রোগী দেখার সময় ভুয়া চিকিৎসক আব্দুল কাইয়ুমকে হাতে নাতে আটক করে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল কাইয়ুম ২ বছর ধরে ওই ফার্মেসিতে এমবিবিএস চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। অভিযানের সময় সাফিয়া (২৪) নামের একজন নারী রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছিলেন এই ভুয়া চিকিৎসক। এসময় আব্দুল কাইয়ুম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (উত্তরার ৮ নং সেক্টরের ৭ নম্বর রোডের ৩২ নম্বর বাড়ি) থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী এমবিবিএস কোর্স করে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল থেকে ১ বছরের ইন্টার্নি করেছেন মর্মে সার্টিফিকেট দেখান। তবে তিনি যে হাসপাতাল থেকে ইন্টার্নি করেছেন তা তিনি কখনো দেখেননি বা এর কোনো অস্তিত্ব নেই বলে স্বীকার করেন।
এছাড়া তিনি যে এমবিবিএস সার্টিফিকেট দেখান সেটিও সঠিক নয়। তিনি স্বীকার করেন পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হলেও কোনো ক্লাস হয়নি, পড়াশুনা ছাড়াই সার্টিফিকেট দেয়া হয়। তিনি বর্তমানে এফসিপিএস ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছেন বলেও জানান। সেটিও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ওই বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে এমবিবিএস কোর্সের বিজ্ঞাপন দিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারণকে সর্তক করে।
কিন্তু তারপরও কিছু ব্যক্তিকে ভর্তি করে এবং পড়াশুনা ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট প্রদানের কথা জানান অভিযুক্ত কাইয়ুম। দুই শতাধিক ব্যক্তি এভাবে এমবিবিএস সার্টিফিকেট কিনে সারাদেশে চিকিৎসা প্রদান করছেন। তারা নিজেরাই ভুয়া কাউন্সিল গঠন করে নিজেদের রেজিস্ট্রেশন প্রদান করে দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে ঝুকিপূর্ণভাবে চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম থেকে এ ধরনের আট ভুয়া চিকিৎসককে সাজা দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।