কক্সবাজার ঘুরে: কেন্দ্রের সবলতায় আওয়ামী লীগ শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও তৃণমূলের সর্বত্র সেই ছোঁয়া নেই। এরই প্রকৃষ্ট নজির কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। বিশৃঙ্খল নেতাকর্মীরা তাই সভানেত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ চাইছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানাচ্ছেন, নিজেদের দ্বন্দ্ব কিছুতেই কমছে না জেলা আওয়ামী লীগে। সভাপতি কে হবেন, কে হবেন সাধারণ সম্পাদক- এ নিয়ে দিনের পর দিন একে অন্যের সঙ্গে ‘ঠ্যালাঠেলি’ করছেন নেতাদের কয়েকজন।
অনুসন্ধানে সহজেই বের হয়ে আসে তাদের নামও। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমেদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপি, কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী সেই নেতাদের অন্যতম বলে জানা গেছে।
এই নেতাদের প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। এক নেতার অনুসারি অন্য নেতার নির্দেশনা কিছুতেই মানছেন না।
দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, বর্তমান কমিটির আয়ু ১২ বছর। তিন বছরে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণেই। যদিও ওই নেতারাও সম্মেলন চান, কিন্তু সেই সঙ্গে সভাপতিত্বের দাবিতেও অনড় বলে সম্মেলন আর হয়ে ওঠে না।
তিনি বলেন, গত ১০টি মাস ধরেই নানা সময় তারিখ দেওয়ার পরেও সম্মেলন হয়নি। কর্মীরাও তাই বিরক্ত হচ্ছে।
এই নেতা আরও স্পষ্ট করে জানান, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর এবং উখিয়ায় কমিটি করতে বিভিন্ন সময় তারিখ দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি।
জেলার প্রভাবশালী অপর এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, কক্সবাজার আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শূন্যের কোটায় রয়েছে।
তিনি বলেন, আন্দোলনে শক্তি দিয়ে মোকাবেলার লোক আমাদেরও রয়েছে। তবে সেটিকে রাজনৈতিক মোকাবেলা বলা যাবে না। এখানে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার রাজনৈতিক সক্ষমতা নেই আওয়ামী লীগের। যা খুবই দুঃখজনক।
গ্রুপিং-এর কারণে নেতাদের অনুসারিরাও ক্রমশ ছত্রভঙ্গ ও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দল করছি। নিজের চেয়ে দল বেশি ভালোবাসি। তাই এমন অবস্থা ভালো লাগে না। অতিসত্বর সুরাহা চাই এবং সেজন্য দলনেতার সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
নজরুল বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) যাদের ঠিক করে দেবেন, তাদের নেতৃত্ব মানতে কারও আপত্তি থাকবে না। এতে সাংগঠনিকভাবে দল আরও সুসংগঠিত হবে। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত ছাড়া কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
এক্ষেত্রে দলটির আরেক সিনিয়র নেতা উদাহরণ টানেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থার।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এক সময় দলের খুবই দুর্বল অবস্থা ছিল। কিন্তু সভানেত্রীর হস্তক্ষেপে সেসব অনেকখানি ঠিক হয়েছে বলা যায়। এখন তারা অনেক সুসংগঠিত। কক্সবাজারেও সেই উদ্যোগ হলে ভালো হয়।
কক্সবাজার পৌর-আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম স্পষ্ট করেই নিজের দলের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য কেউ নেই। অনেকেই নিজের আখের গোছানো নিয়ে ব্যস্ত। দলের জন্য কিছু করতে সময় পান না তারা।
তিনি বলেন, গ্রুপিং আছে, কিন্তু স্ট্রং নয়। সবাই সম্মেলন চায়। কিন্তু সেটিও হচ্ছে না এসব সমস্যার কারণে।
তিনি বলেন, নেতৃত্বের বিরোধ না হয়ে শুধু নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকলে তাও হতো। সবসময় সেটা নেগেটিভও নয়। কিন্তু এখানে যে অবস্থা বর্তমানে রয়েছে, সরাসরি নেত্রীর পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া সমাধান আসবে বলে মনে হয় না।
নজরুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, কক্সবাজার আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে অচল হয়ে পড়েছে। গতিশীলতা আনতে পারেন একমাত্র নেত্রীই।
তিনি বলেন, শুধু আন্দোলন মোকাবেলায় নয়, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এসব সমস্যা না মেটালে পরে আফসোস করা লাগতে পারে।
এই নেতা একটি পরামর্শের কথাও জানান । তিনি বলেন, একজন আহ্বায়ক, পাঁচজন যুগ্ম-আহবায়ক নিয়ে কমিটি করে থানা পর্যায়ের সমস্যাগুলো মেটানো যায়। তাহলে বৃহৎ পরিসরের সমস্যা সমাধান আরও সহজ হয়ে আসবে।