যে পরিবারের সদস্যরা দুটি ভাষা ব্যবহার করেন, সেখানকার শিশুরা তুলনামূলক তাড়াতাড়ি শিখতে পারে। তারা একটিমাত্র ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত পরিবারের শিশুর চেয়ে এগিয়ে থাকে। সিঙ্গাপুরের একদল গবেষক এ তথ্য জানিয়েছেন।
গবেষকেরা বলছেন, দুটি ভাষা ব্যবহারকারী পরিবারের শিশুরা একই ছবি বারবার দেখানো হলে বিরক্ত হয়। তারা বরং নতুন কোনো ছবি দেখার প্রতি বেশি আগ্রহ বোধ করে। এই প্রবণতার সঙ্গে পরিণত বয়সে উচ্চতর বুদ্ধিমত্তা (আইকিউ) অর্জনের সম্পর্ক রয়েছে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর এবং সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট ফর ক্লিনিক্যাল সায়েন্সেসের একদল গবেষক শিশুর ভাষা শেখার সামর্থ্য এবং পরিবারে ভাষা ব্যবহারের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন। এতে নেতৃত্ব দেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক লেহের সিং।
পরিবারে একাধিক ভাষা ব্যবহারের কারণে শিশুদের ওপর কী প্রভাব পড়ে, তা পর্যবেক্ষণে সিঙ্গাপুর শহরের বিভিন্ন হাসপাতালের সহযোগিতা নিয়েছেন গবেষকেরা। দুটি ভাষা ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সিঙ্গাপুরে বেশি। এতে গবেষকদের সুবিধা হয়েছে। শিশুদের দুটি ভাষা শেখা এবং এর প্রভাব নিয়ে এর আগেও গবেষণা হয়েছে। তবে সেগুলো ছিল ভাষাগত দক্ষতাকেন্দ্রিক। এই প্রথম ভাষা ব্যবহারের বাইরে আর কী সুবিধা শিশুরা পেয়ে থাকে, তা নিয়ে লেহের সিং ও তাঁর সহযোগীরা গবেষণা করলেন।
লেহের সিং বলেন, পরিণত বয়সে দ্বিতীয় বা নতুন একটি ভাষা শেখা বেশ কষ্টকর ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার। এ থেকে অনেকে ধারণা করেন, শিশুদের ক্ষেত্রে তা আরও কঠিন হবে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল। অনেক গবেষণায় দেখা যায়, শিশুরা খুব সহজেই দ্বিতীয় ভাষা শিখতে পারে। আর এই দ্বিতীয় ভাষা শেখার অভিযানে তারা বাড়তি সুবিধাও পায়।
গবেষকেরা বলেন, শিশুর কোনো কিছু বোঝার সামর্থ্য পরীক্ষা করা সহজ কাজ নয়। তাঁরা এ ক্ষেত্রে ‘ভিজ্যুয়াল হ্যাবিটেশন’ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এতে শিশুর ভবিষ্যৎ বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কেও কিছু ইঙ্গিত মেলে। লেহের সিংয়ের নেতৃত্বে গবেষকেরা সিঙ্গাপুরের ১১৪টি ছয় মাস বয়সী শিশুর ওপর গবেষণা করেন। ‘ভিজ্যুয়াল হ্যাবিটেশন’ পরীক্ষায় ওই শিশুদের একটি ফুটফুটে খেলনার ছবি বারবার দেখানো হয়। ছবির মধ্যে ছিল খেলনা ভালুক অথবা নেকড়ে। একটি ছবি বারবার দেখানোর কারণে তারা আকর্ষণ হারালে অন্য ছবি দেখানো হয়। এতে আবার তাদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যায়।
পরীক্ষায় দেখা যায়, দুটি ভাষা ব্যবহৃত হয় এমন পরিবারের শিশুরা এক ভাষা ব্যবহারকারী পরিবারের শিশুর চেয়ে অনেক দ্রুত একই ছবির প্রতি আকর্ষণ হারায়। আর অন্যদের চেয়ে এই শিশুদের মধ্যে নতুন ছবির প্রতি বেশি আকর্ষণ দেখা যায়। দুই ভাষা ব্যবহারকারী পরিবারের শিশুদের আকর্ষণ হারানো এবং নতুন ছবির প্রতি আকর্ষণ তৈরির হার তাদের বোঝার ক্ষমতা ও শেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে পরিণত বয়সে ওই শিশুদের বিকশিত হওয়ার ইঙ্গিত মেলে।
গবেষকেরা বলছেন, দুই ভাষা ব্যবহারকারী পরিবারের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট ভাষা হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেকোনো দুটি ভাষা হলেই চলে। পরিবারে দুটি ভাষার প্রচলনকেই শিশুদের বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণ বলে ধারণা করা হয়। কারণ, দুটি ভাষা বোঝার জন্য তাদের মধ্যে তথ্য প্রক্রিয়াজাত ক্ষমতা বেড়ে যায়। তারা শুধু দুটি ভাষার শব্দই বুঝতে শেখে না, একই সঙ্গে এ দুয়ের শব্দের পার্থক্যও শেখে, যার প্রভাব পড়ে তাদের পরিণত বয়সেও।