সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার হওয়া তৃণমূল নেতা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্রের পাশে দাঁড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শনিবার মদনের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে তিনি মদনের গ্রেপ্তারকে বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেন। এক পর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে মমতা ব্যানার্জি আশালীন ভাষাও ব্যবহার করে বসেন। তিনি কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘কে হরিদাস পাল… আমাকে বাম্বু (বাঁশ) দাও।’ নিজে প্রশাসনে না থাকলে এদের জিভ ছিঁড়ে ফেলে দিতেন বলেও এ সময় হুঙ্কার দেন মমতা। তিনি তৃণমূলের সমাবেশে আবারো ঘোষণা দেন, ‘মদন চোর এটা আমি বিশ্বাস করি না।’ এদিন পশ্চিমবঙ্গজুড়ে তৃণমূলের ডাকে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। মদন মিত্রকে আদালতে নেয়ার পথেও তৃণমুল কর্মীরা বাধা সৃষ্টি করে। শনিবার আদালত মদন মিত্রকে আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সংবাদসূত্র : জি-নিউজ, এবিপি, ইনডিয়া টাইমস
কলকাতায় শনিবার মদন মিত্রের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তৃণমূলের জনসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘মদন চোর আমি বিশ্বাস করি না। মদনের এমন অভাব নেই যে, সারদার টাকায় বউ, পরিবারকে খাওয়াবে আসলে বাংলার ক্রীড়াজগতকে তছনছ করতে চাইছে কেন্দ্র।’ তিনি এ সময় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতি দোষারোপ করে বলেন, কেন্দ্র সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশেই মদনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় তৃণমূল এমপিরা গর্জে উঠবে বলেও হুশিয়ারি দেন তৃণমূল নেত্রী।
সমাবেশের এক পর্যায়ে মমতা মেজাজ হারিয়ে আশালীন ভাষা ব্যবহার করে বসেন। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কে হরিদাস পাল… আমাকে বাম্বু দাও।’ এক পর্যায়ে মঞ্চ থেকে মাইক্রোফোন ছুঁড়ে ফেলে দেন। তিনি বিজেপিকে উদ্দেশ করে বলেন, এই সরকার যা ইচ্ছা তাই করছে। ক্ষমতায় এসে ভাবছে কি-না কি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বেশি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে। নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ওরা ভয় পাচ্ছে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর আগে শুক্রবার তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, ‘সাহস থাকলে আমাকে গ্রেপ্তার করুক।’
এদিকে মমতার মেজাজ হারানোর ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি রাহুল সিনহা কটাক্ষ করে বলেন, কুণালের পথে মদনও যাতে সিবিআইয়ের কাছে মুখ না খোলে সেই কারণে ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই ভয় থেকেই যখন তখন এ ধরনের মন্তব্য করছেন তিনি।?
মদন মিত্রের এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে শনিবার। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে তৃণমুলের মিছিল-অবরোধ-বিক্ষোভে সারা রাজ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। আসানসোল ও রানীগঞ্জে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা মিছিল করে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। এছাড়া হাওড়ায় কোনা এক্সপ্রেসওয়েও অবরোধ করে তৃণমূল কর্মীরা। মদনের সমর্থনে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের ডাকবাংলো মোড়েও অবরোধ করে তৃণমূল।
এছাড়া মদন মিত্রকে আদালতে নেয়ার পথেও ব্যাপক অবরোধ সৃষ্টি করে তৃণমুল কর্মীরা। কলকাতার সমাবেশ থেকে তৃণমূল হুশিয়ারি দিয়েছে, মদন মিত্রকে ছেড়ে না দিলে আজ রোববার থেকে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে। এছাড়া কলকাতার ময়দানে গোষ্ঠগোপালের মূর্তির সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয় তৃণমূল নেতারা।
যাকে ঘিরে এত ঘটনা সেই মদন মিত্রকে আপাতত সিবিআই হেফাজতেই থাকতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত। সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে সাতদিনের সিবিআই হেফাজতের দাবি করা হলেও আদালত মদন মিত্রকে চারদিনের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর; অর্থাৎ মঙ্গলবার আবারো আলিপুর আদালতে তোলা হবে মদন মিত্রকে।
অন্যদিকে, এদিন আলিপুর আদালতের ভেতরে তৃণমূল আইনজীবী সেলের প্রায় ৫০ জনের একটি প্রতিনিধি দল মদন মিত্রের জামিনের আবেদন জানায়। তাদের কারণে কার্যত কোনোভাবেই নিজেদের বক্তব্য আদালতে পেশ করতে পারেননি সিবিআইয়ের আইনজীবী। যদিও, মদন মিত্রের জামিন খারিজ করে সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি, এদিন সওয়াল-জবাবে অংশ নেন মদন মিত্র। তিনি আদালতে অভিযোগ করেন, দীর্ঘ জেরা শেষে যখন তিনি চা খাচ্ছেন, সেই সময়ে সিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা তাকে জানান, দিলি্লর নির্দেশ, তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। যদিও, এই অভিযোগের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সিবিআইয়ের আইনজীবী। কারণ, তৃণমূলের ৫০ জনের আইনজীবীর সওয়াল-জবাবের মধ্যে সিবিআই কার্যত কিছুই বলতে পারেনি। তবে ভিড় এড়িয়ে আদালতে তারা এটাই জানায়, মদন মিত্রের গ্রেপ্তারের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। –
Post by আশিকুর রহমান চৌধুরী স্বদেশনিউজ২৪.কম