শুধু শীতকালে নয়, গ্রীষ্মকালেও হচ্ছে শিম চাষ। আর এ গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে লাভবান হতে শুরু করেছে যশোরের অভয়নগর উপজেলার কৃষকরা। এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে চাষির সংখ্যা, বেড়েছে আবাদি জমির পরিমাণ। উচ্চফলনশীল নবীন জাতের গ্রীষ্মকালীন এ শিম চাষে বীজ, সার ও রক্ষণাবেক্ষণে তদারকি করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ মূল্য ফসলের মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিম, লতি রাজ কচু, বেগুন, পেঁপে ইত্যাদির প্রদর্শনী করা হয়। এসব ফসলের মধ্যে শিমের বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় কৃষকরা শিম চাষে আকৃষ্ট হতে শুরু করেন। বর্তমানে অভয়নগরে প্রতিকেজি শিমের বাজারমূল্য ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করতে হলে ইংরেজি জুন মাস বাংলা জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে রোপণ করতে হয়। প্রতিশতক জমিতে চাষ খরচ হয় প্রায় ৫০০ টাকা। ফলন পাওয়া যায় শতক প্রতি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার। আর শীতকালীন শিম চাষে শতক প্রতি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার ফলন পাওয়া যায়।
সোমবার সরেজমিনে উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের সফল ও লাভবান শিমচাষি আনিসুর রহমানের শিম ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, আনিসুর রহমান ও তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলে ক্ষেতে কাজ করছেন। এ সময় তিনি জানান, গত বছর গ্রীষ্মকালীন নবীন জাতের শিম চাষ করেছিলেন ১৮ শতক জমিতে। খরচ বাদে লাভ হয়েছিল প্রায় ২৫ হাজার টাকা। এ বছরের ৫০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চাষের শুরুতে ৪০০ গ্রাম বীজ, ৭০ কেজি টিএসপি, ৫০ কেজি এমওপি ও ২০ কেজি ইউরিয়া সার বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। কীটনাশক ও জোন খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা তার নিজের খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে বাজারে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করেছেন। তিনি আশা করেন এ বছর লাখ টাকা লাভ হতে পারে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ গোলাম ছামদানী বলেন, দেশ এখন কৃষিতে সাবলম্বী। জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রগ্রাম (এনএটিপি) এর আওতায় অভয়নগর উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে ১০টি করে মোট ৯০টি কৃষক সমবায় সমিতি (সিআইজি) রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ফসলের ওপর ১৩০টি প্রদর্শণী বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং ২ হাজার ৪৯০ জন চাষিকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রদর্শনী বাস্তবায়নের জন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ, সার, বীজসহ সব ধরনের উপকরণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুস সোবহান বলেন, শিম, টমেটো, বাঁধাকপি ইত্যাদি মূলত শীতকালে চাষ করা হয়। তবে গ্রীষ্মকালে চাষ করলে ভালো দাম পাওয়া যায়। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১১৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম- নবীন, ঘৃত কাঞ্চণ, ইন্ডিয়ান আইরেট, বাইন তারা ও বারমাসি বেগুনি জাতের শিম চাষ হয়েছে। এ ছাড়া ১০ হেক্টর জমিতে মুলা তাসা কিষান, রকি ৪৫ ও আর্লি ৪০ জাতের বীজ চাষ হয়েছে। পাঁচ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে, বাঁধাকপি গ্রিন ৬০, বিউটি বল ও সুপার গ্রিন জাত। ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে পালন শাক কপি পালং এবং ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে মিষ্টি কুমড়া সুইট বল ও সুপ্রিয়া।