রমনা বটমূল থেকে: মনসুর আলী মুখে হাসি ছড়িয়ে বললেন, ‘তবুও কিছু হুজুগে বাঙালি পান্তা-ইলিশ খাবে। ছুটে আসবে রেস্টুরেন্টে। দাম দিয়েই খাবে। আর সে জন্যই আয়োজন।’
রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের যে মূল অনুষ্ঠান হয় তার পাশ ঘেঁঘে রেস্তোরাঁয় পান্তা-ইলিশের আয়োজন নিয়ে কথা হচ্ছিলো।
আগে যেটি রমনা রেস্তোরাঁ ছিলো, সেটি এখন ইংরেজি নাম নিয়ে হয়েছে ইউরো- এশিয়ানো। আর ইংলিশ রেস্তোরাঁয় মূল খাবার থাই-চায়নিজ। তবে মুনাফালোভী রেস্তরা মালিক নববর্ষে আয়োজন করেছেন পান্তা-ইলিশের। সে কথাই বলছিলেন রেস্তোরাঁর সিকিউরিটি গার্ড মনসুর আলী।
তখন মধ্যরাত পার হয়েছে। মনসুর আলীর ডিউটি শেষ তাই খালি গায়ে হাওয়া লাগাচ্ছিলেন। পাশেই একই উদোম গায়ে ঘাসের উপর বসে সোলেমান আলী। তিনি এই হোটেলের ম্যানেজার কাম সুপারভাইজার কাম বাজার সরকার কাম আরো ম্যালা কিছু।
মনসুর আলীর ভাষায় ‘অলরাউন্ডার’।
সে কথায় এক মুখ হাসি ছড়িয়ে সাংবাদিক পরিচয় জেনে সোলেমান বললেন, ‘বলেন কি জানতে চান?’
বেশতো সাজিয়েছেন। ইলিশের ছবি টানিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন পান্তা-ইলিশ খাওয়াবেন। মোট কটা ইলিশ বিক্রি করবেন এবারের পহেলা বৈশাখে। এই প্রশ্নে সোলেমান আলীর কণ্ঠে আক্ষেপের সুর ঝরলো। ‘ইলিশ তো পাওয়াই যায় না, মোট ১০০টি ইলিশ কেনা হয়েছে। দুই হাজার টাকা কেজি দরে। প্রতিটি এক কেজি মাপের হলে সব মিলিয়ে দুই লাখ টাকার ইলিশ।’
রাতে ইউরো-এশিয়ানোর সাজগোজ তখনো চলছিলো। মূল ফটকে বেলুনের গেট তৈরি হচ্ছে। সিলিংয়ের সঙ্গে ঝোলানো শোলায় তৈরি ইলিশ। আর এখানে ওখানে বড় বড় ব্যানার লাগানো। তাতে জানানো হয়েছে, পান্তা ইলিশের খবর।
ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। অনেকেই ইলিশ না খাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার জানিয়েছেন পহেলা বৈশাখে গণভবনে তার খাদ্য তালিকায় থাকছে না ইলিশ মাছ।
জাতীয় মাছটি রক্ষার স্বার্থে প্রজনন মওসুমে এই পহেলা বৈশাখে ইলিশ ধরাকে নিরুৎসাহিত করতেই প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে গণভবনের খাদ্য তালিকায় থাকছে খিচুরির সঙ্গে বেগুনভাজা, ডিম ও মুরগির মাংস।
প্রধানমন্ত্রীর যখন এই সিদ্ধান্ত তখন একটি রেস্টুরেন্টে এমন ঘটা করে ইলিশ-পান্তার আয়োজন দৃষ্টিকটু ঠেকে। সে কথা প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরাই স্বীকার করে নিলেন।
তবে বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখে তাদের বৃহস্পতি কতটা তুঙ্গে উঠবে তার বিচার এই ইলিশের বিক্রির ওপরই নির্ভর করবে। দুই হাজার টাকা কেজি দরে কিনে তা চড়া দড়েই বিক্রি করতে হবে। প্রতি পিস ৩০০ টাকার কম হবে না, বললেন সোলায়মান।
‘তারপরেও হুজুগে বাঙালিরা ছুটে আসবে, পান্তা-ইলিশ খাবে!’ বলেন তিনি।
এবছর রমনার এই রেস্তরা ছাড়া ছায়ানটের অনুষ্ঠানের আশেপাশে আর কোনো পান্তা ইলিশের আসর বসতে দেওয়া হবে না। সেই সুযাগটিই লুফে নিচ্ছে ইউরো-এশিয়ানো। ফলে তারা লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়েছে এর পেছেন, কয়েকগুন মুনাফার প্রত্যাশায়।
গভীর রাতে রমনা বটমূল এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন রমনা থানার এএসআই সুমন দাস। তিনি বলেন, পান্তা ইলিশ হোক আর যাই হোক রমনা পার্কের মূল অনুষ্ঠানের আশে পাশে কাউকেই বসতে দেওয়া হবে না। সবাইকে হটিয়ে দেওয়া হবে, এটাই সিদ্ধান্ত।
রেস্টুরেন্টের প্রসঙ্গে তিনি বললেন, সেখানে যা হয় হোক, বাইরে কোনো পান্তা-ইলিশের আসর বসতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে কঠোর থাকতে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য তালিকা থেকে ইলিশ বাদ দেওয়ার খবর জানেন এই তরুণ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমি অনলাইনগুলোতে দেখেছি এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। হ্যান্ডহেল্ডেই দেখে নিয়েছেন সুমন দাস।
বললেন, কাজের স্বার্থেই আমাদের বাইরে থাকতে হয়। তাই অনলাইন, ফেসবুক থেকেই খবর জানি। বাংলানিউজে এ সংক্রান্ত খবরটি দেখানো হলে বললেন, হ্যাঁ এটাইতো দেখেছি।
এরপরেও অনেকে পান্তা-ইলিশ বিক্রি করবে, তাদেরতো ঠেকানো যাবে না। আর খাবেও অনেক হুজুগে বাঙালি।