জাজিরা-শিবচর পয়েন্ট থেকে ফিরে: হ্যামারের আঘাতে প্রমত্তা পদ্মা নদীর পানির নিচে মাটি ভেদ করে প্রতিক্ষণে ডুবছে ইস্পাতের তৈরি বিশালাকৃতির পাইপ, সেই পাইপে পিলারের উপর ভিত গাঁড়বে স্বপ্নের পদ্মাসেতু।
আড়াই হাজার টন ওজনের হ্যামারের আঘাতে ১০ ফুটেরও বেশি গোলাকার পাইপ এক ইঞ্চি পর্যন্ত মাটির নিচে বসছে প্রমত্তা পদ্মায়। এই পিলারগুলো এখন অনাগত পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল আকর্ষণ।
পদ্মাপাড়ের মাওয়া ও জাজিরা-শিবচর পয়েন্টে মহাযজ্ঞের দৃশ্যপট বলছে, বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প এখন বাস্তবতার খুব কাছাকাছি।
ঢাকা হতে পদ্মা নদী যাওয়ার আগেই মাওয়া পয়েন্টের বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে পদ্মাসেতু প্রকল্পের মহাযজ্ঞ। এপারে চলছে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজ। নির্মাণাধীণ সড়ক পেরিয়ে পদ্মাতীরে বড় বড় ক্রেন, ট্রাক-লরি, সাথে ব্যস্ত সাদা, সবুজ ও হলুদ ক্যাপ পরা দেশি-বিদেশি কর্মীদল।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের স্পিড বোটে প্রমত্তা পদ্মার বুকে যেতে যেতেই চালক আব্দুল খালেক বলছিলেন, ওই যে ৩৭ নম্বর পিলার। হাত ইশারায় বললেন, ওটা ৩৬ নম্বর, এটার কাজ চলছে। আগ্রহ নিয়ে টিম পদ্মার ওপার বুকের ৩৬ নম্বর পিলারের কাছে উঠলো বিশালাকৃতির হ্যামারের উপর।
মূল সেতু নির্মাণের দায়িত্বে আছে চীনের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।
হ্যামারের উপর বাংলাদেশি কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেল জাজিরা পয়েন্টের কাছে দুটি পাইলিং চলছে, আর স্থলভাগে চলছে আরও তিনটি পাইলিং কাজ।
হাজার টন হ্যামারে ৩৬ নম্বর পিলার বসানোর কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশি কর্মী তোফায়েল হোসেন বলেন, এখানে একটি পাইপ বসেছে। আর একটি বসানোর কাজ চলছে।
আড়াই ইঞ্চি ব্যাসের ৭০ মিটার লম্বা এবং ৩০০ টন ওজনের পাইপের উপর হ্যামারের একটি আঘাত পড়লে এক থেকে দেড় ইঞ্চি মাটির নিচে বসছে বলে জানান তোফায়েল।
পাইলিংয়ে ৬টি পাইপের উপর একটি পিলার উঠবে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব পিলারের উপরই মূল পদ্মাসেতু দাঁড়াবে।
চীনা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে পাইলিংয়ের কাজ করা বাংলাদেশি কর্মীরা আরও জানান, ৩৭ নম্বর পিলারের জন্য ৩টি পাইপ ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে। এভাবে পুরো পদ্মার বুকে বসছে পাইপ, তার উপর পিলার, পিলারের উপর পদ্মাসেতু।
পদ্মাসেতুর পাইলিং কাজের জন্য আড়াই হাজার টন ওজনের হ্যামারটি জার্মানিতে তৈরি করা হয় বলে এর আগে জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
জাজিরা পয়েন্টে স্থলভাগে তিনটি স্থানে পাইলিং করা হচ্ছে জানিয়ে কর্মীরা বলছেন, এগুলোর একটির উপর চার হাজার টন ভর দিয়ে রাখা হয়, যাকে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বলছে টেস্ট পাইলিং।
চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করা বাংলাদেশের কর্মী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভর দিয়ে ২৮ দিন টেস্টিং করা হবে, এরপর পরীক্ষায় টিকে গেলে তার উপরই বসবে পিলার।
এই টেস্টিং পাইলিংয়ে সর্বদা চীনা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন।
দুই পাশে অ্যাপ্রোচ রোড বা সংযোগ সড়ক হয়ে একে একে গাঁড়া এসব পিলারের উপর দিয়ে পদ্মার বুক চিরে উড়বে স্বপ্নের পদ্মাসেতু।