রায়হান, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান, স্বদেশ নিউজ২৪.কম : আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন প্রকার মানুষের বসবাস । উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, অথবা নিম্নবিত্ত আবার কেউ কেউ অসহায়, অনেকে পথশিশু, আর বাংলাদেশের জাতীয় শিশুনীতিতে ১৪ বছরের কম বয়সী ছেলেমেয়েদের এবং বাংলাদেশের সংবিধানে ০-১৮ বছরের কম বয়সী সকলকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদেও ১৮ বছরের কম বয়সের সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। শিশু অধিকার সনদ প্রত্যেক দেশের নিজস্ব আইন ও প্রথাকেও স্বীকৃতি দেয়। আমাদের দেশের শিশুর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে পথশিশুরা। যারা সাধারণত টোকাই নামে বেশি পরিচিত। এ সকল শিশু রাস্তা, আঁস্তাকুড় ও অন্যান্য স্থানে জিনিসপত্র কুঁড়িয়ে বেঁচে থাকে।
বেশিরভাগ পথশিশুর পিতা-মাতা নেই। অনেক সময় তাদের পিতা-মাতা থাকলেও তাদের পরিচয় পাওয়া যায় না। আসলে তাদের রাস্তায় জন্ম হয়, রাস্তায় জীবন কাটে এবং অবশেষে রাস্তায় তাদের মৃত্যু হয়। অনেকের পিতা-মাতা আছে কিন্তু যোগাযোগ নেই। এসব শিশুরা সাধারণত দারিদ্র, দাম্পত্য-কলহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, পরিবার থেকে পলায়ন ও যৌন নিপীড়নের কারণেই রাস্তায় নিক্ষিপ্ত হয় । পথশিশুরা বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আদর-সোহাগ কি জিনিস তা তারা বুঝে না, জানে না। জীবনের প্রতি তাদের মায়া না থাকায় তারা বিপদগামী হয়ে উঠে।
সমাজে বাবা-মায়ের আদরের অন্যান্য সন্তানের মতো পথশিশুদের যেসময়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেসময় তারা অনাদর ও অবহেলায় রাস্তায়, ফুটপাতে, স্টেশনে, পথেঘাটে, বনবাদারে ঘুরে বেড়ায়। সবকিছু থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা এক সময় বিদ্রোহী, সন্ত্রাসী, মাস্তান, টোকাই হয়ে বড় হতে থাকে। আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত এই শিশুরা সমাজের সম্পদ। তাদেরকে যথাযথ আদর ভালোবাসা দিয়ে প্রতিপালন করলে তারা সমাজে বিদ্বেষী না হয়ে সমাজের বন্ধু হতে পারে। ফুলে ফলে বিকশিত করতে পারে তাদের জীবন ব্যবস্থা।
সেই সব অসহায় সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ও খেঁটেখাওয়া মানুষদের নিয়ে রাজধানী ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে আজ আরজে সাইমুরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় পপাইস নিবেদিত ‘স্বদেশ ভাবনা’। ভিন্নধর্মী এই আয়োজনে রাজধানী ঢাকার সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু, খেঁটেখাওয়া মানুষ এমনকি প্রতিভাবান মানুষদেরকে সবার সামনে তুলে আনার প্রচেষ্টা করা হয়। যারা সবসময় সবার অলক্ষে থেকে যায়।
ঠিক এমনই আয়োজনে স্বদেশ পরিবার হেমায়েতপুর বাজারে কিছু পথশিশুদের সাথে কথোপকথনে জানতে পারে অসহায় এই শিশুদের মনোবাসনা যা তারা হয়ত কখন কাওকে সেভাবে বলতে পারেনি কিংবা তারা তাদের বাবা মায়ের সীমাবদ্ধতার কাছে পরাজয় শিকার করে আজ কেও পানের বা মুদির দোকানদার । এদের কয়েকজন আবার বড় হয়ে মুদি দোকানদার হবার স্বপ্ন দেখে । আমরা যেখানে কত বড় স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠি সেখানে গোবরে পদ্মফুলও মিলল । এক ছোট্ট বালিকা যার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা । অপরদিকে কিছু ট্রাক চালকের সাথে আলাপচারিতা কালে জানা যায় যে তাদের জীবনটা কতটা কঠিন । রাতের পর রাত জেগে তারা মালামাল পরিবহন করে এবং সময়মত গন্তব্যে নিয়ে যান। যাযাবর জীবনযাপন আর পিচ ঢালা অই কালো রাস্তা যেন তাদের সংসার ।
আর হোটেল বেয়ারার অসাধারণ গায়কী অসলেই অবিশ্বাস্য। এমন অনেক মানুষ আমাদের পাশেই আছে আমরা হয়ত তাদের সেভাবে লক্ষ করি না অথবা আমরা আমাদের নিজেদের নিয়ে একটু বেশি ভাবি আর তাই আমরা আমাদের পাশের মানুষটির খবর নেবার সময় পাই না। আমরা সবাই দেখি, আফসোস করি আবার কেউ এই বিষয়গুলো মেনে নিতে না পেরে নীরবে কান্না করি।
অনেকে নিজেকে ধিক্কারও দেয় এবং বলি আমরা কি পারবনা এই দেশ থেকে অভাব দূর করতে? কেন এমন হবে এই পথ শিশুদের জীবন? কেনো নেই তাদের স্বাভাবিক জীবন? অনেকে এসব প্রশ্নে উত্তর খুঁজছি। এই কথাগুলো আমরা সবাই কম-বেশি জানি এবং বুঝি। এরপরেও কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ায় না। চলুন সবাই সহযোগিতার হাত বাড়ায়। আপনার দেখাদেখি অন্যরাও সহযোগিতা করবে।