বাণিজ্য ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম : আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ৫০ ডলার পেরিয়ে গেছে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় থাকা পণ্যটির দাম বৃহস্পতিবার চার মাসের মধ্যে চলে এসেছে সর্বোচ্চে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে পণ্যটির। এর প্রভাব পড়েছে দামে। খবর মার্কেটওয়াচ।
যুক্তরাষ্ট্রে টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমতির দিকে রয়েছে। সম্প্রতি এ সরবরাহ আরো কমিয়ে দিয়েছে হারিকেন ম্যাথু।
নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলে ৬১ সেন্ট বেড়েছে। নভেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে এদিন প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ৫০ দশমিক ৪৪ ডলারে। ফ্যাক্টসেটের তথ্য অনুযায়ী, ৯ জুনের পর সর্বোচ্চে পৌঁছেছে পণ্যটির দর।
অন্যদিকে লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) ব্যারেলে ৬৫ সেন্ট বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্ট অয়েলের দাম। এদিন ডিসেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫২ দশমিক ৫১ ডলারে, যা চলতি বছরের জুনের পর সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরবৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রাইস ফিউচার্স গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক ফিল ফ্লিন বলেন, ‘শীর্ষ তেল উত্তোলক দেশগুলো পণ্যটির উত্তোলন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে সম্মত হয়েছে। অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) সর্বশেষ বৈঠকে এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী বৈঠকে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে কয়েক দিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে পণ্যটি।’
তিনি আরো বলেন, ‘হারিকেন ম্যাথুর প্রভাবে জ্বালানি তেলের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এটিও পণ্যটির দরবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।’ ফ্লিন এ ঝড়কে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমতির দিকে রয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে হারিকেন ম্যাথু সরবরাহ সংকটকে প্রকট করে তুলেছে। ঝড়ের কারণে বন্দরগুলো দিয়ে পণ্যটির চালান বন্ধ রয়েছে।’
নিমেক্সে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পাশাপাশি দাম বেড়েছে গ্যাসোলিন ও হিটিং অয়েলের। বৃহস্পতিবার নভেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে গ্যালনে আধা সেন্ট বেড়েছে গ্যাসোলিনের দাম। এদিন প্রতি গ্যালন গ্যাসোলিন বিক্রি হয়েছে ১ দশমিক ৪৯৮ ডলারে। অন্যদিকে নভেম্বরের চুক্তিতে গ্যালনপ্রতি ১ দশমিক ৪ সেন্ট দাম বেড়েছে হিটিং অয়েলের। এদিন শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি গ্যালন হিটিং অয়েল বিক্রি হয়েছে ১ দশমিক ৫৯৬ ডলারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) তথ্য অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ ৩০ লাখ ব্যারেল কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পণ্যটির সরবরাহ সব মিলিয়ে ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ ব্যারেল কমেছে। তবে গত বছরের চেয়ে দেশটিতে পণ্যটির সরবরাহ এখনো ৩ কোটি ৮৭ লাখ ব্যারেল বেশি রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্নাইডার ইলেকট্রিকের পণ্যবাজার বিশ্লেষক রবি ফ্রেশার বলেন, ‘অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ হ্রাসের বিষয়টি সবখানে আলোচিত হচ্ছে। পণ্যটির দর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সরবরাহ হ্রাস ও উত্তোলন কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।’
২৬-২৮ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত ওপেক আয়োজিত শীর্ষ তেল উত্তোলক দেশগুলোর বৈঠকের পর থেকেই বাড়তির দিকে রয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এ বৈঠকে পণ্যটিতে উত্তোলনসীমা আরোপের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত এসেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উত্তোলক দেশগুলো দৈনিক ৩ কোটি ২৫ লাখ থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করতে পারবে। বর্তমানে পণ্যটির গড় দৈনিক উত্তোলন ৩ কোটি ৩২ লাখ ব্যারেল। উত্তোলনসীমা আরোপের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে পণ্যটির দাম আরো বাড়বে বলে বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা।