দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাইকে অভিশংসন করার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা। তবে এখনই কেলেঙ্কারি ও বিক্ষোভে পর্যদুস্ত প্রেসিডেন্টকে বিদায় নিতে হবে না। ১৮০ দিনের মধ্যে সাংবিধানিক আদালত এ নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেবে। ভোটাভুটির সময় দেশটির পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন হাজারো প্রতিবাদকারী। তারা প্রেসিডেন্টের অপসারণ দাবি করছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি ও টাইম।
এক রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘূর্ণিপাকে আটকা পড়েছেন প্রেসিডেন্ট পার্ক। ওই কেলেঙ্কারির পর ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয় তার বিরুদ্ধে। প্রেসিডেন্ট ও তার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর স¤পর্ককে কেন্দ্র করে এই কেলেঙ্কারির শুরু। অভিযোগ উঠে, তার বান্ধবী চৌ সুন-সিল বড় ধরণের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। প্রভাব বাড়াতে নিজের অবস্থানকে ব্যবহার করেছেন। অভিযোগকৃত একটি দুর্নীতির ঘটনায় প্রেসিডেন্ট পার্কেরও ‘উল্লেখযোগ্য’ ভূমিকা আছে বলে মন্তব্য করেছেন মামলার সরকারী কৌঁসুলিরা। তবে প্রেসিডেন্ট এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার প্রতি পদত্যাগের দাবি জোরালো হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তিনি তা অগ্রাহ্য করেছেন। তিনি জোরাজুরি করে বলেছিলেন, তার ভাগ্য পার্লামেন্টের হাতে ছেড়ে দেবেন তিনি। অন্যথায়, তার পদত্যাগে এক ধরণের ক্ষমতা শূন্যতা তৈরি হতে পারে।
বৃহ¯পতিবার তাকে অভিশংসনের প্রস্তাব সূচনা করে পার্লামেন্ট। এ প্রস্তাবের পক্ষে কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ পার্লামেন্ট সদস্যের ভোট প্রয়োজন। পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা সকলেই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চান। কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রেসিডেন্ট পার্কের সায়েনুরি দল থেকেও ২৮টি ভোট প্রয়োজন হয়। আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিল, সায়েনুরি দল থেকে সম্ভবত যথেষ্ট এমপি দলের বিরুদ্ধে গিয়ে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন। অবশেষে ৩০০ সদস্যের পার্লামেন্টে ২৩৪-৫৬ ভোটের ব্যবধানে অভিশংসনের প্রস্তাব পাশ হয়। এ সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট পার্ক বলেছিলেন, এ ভোটাভুটির ফলাফল তিনি মেনে নেবেন।
তবে পার্লামেন্টে অভিশংসনের পক্ষে পর্যাপ্ত ভোট পড়লেও, প্রেসিডেন্ট পার্ক তৎক্ষণাৎ অপসারিত হবেন না। তার ক্ষমতা স্থগিত করা হবে। তার স্থলে দায়িত্ব নেবেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে পুরোপুরি অপসারন করতে হলে ৯ বিচারক বিশিষ্ট সাংবিধানিক আদালতের চূড়ান্ত সম্মতি প্রয়োজন হবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হতে ৬ মাস লাগবে। সাংবিধানিক আদালত পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলেই কেবল প্রেসিডেন্ট অপসারিত হবেন। আর তা হলে, পার্ক হবেন দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক যুগে প্রথম অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট।