নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে দলের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম কি? বলার অপেক্ষা রাখে না সেটি ইনজুরি। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে দলের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র পেসারদের। এরই মধ্যে ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন পেসার মোহাম্মদ শহীদ ও শফিউল ইসলাম। যদিও তাদের বিকল্প দলে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু দলে থাকা মূল পেসারদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সদ্য ইনজুরি কাটিয়ে উঠেছে। তাসকিন আহমেদের ইনজুরি না থাকলেও তিনি টেস্ট খেলছেন না। ইনজুরি থেকে ফেরা ইবাদতকে দলে নেয়া হলেও তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে। শুভাশিষ রায়, রুবেল হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বির উপর টেস্টে ভরসা রাখা কঠিন। তাই গুঞ্জন ছিল হয়তো টেস্ট আক্রমণের ঘাটতি মেটাতে সাদা পোশাকে ফিরবেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু গুঞ্জনের পাখি ডানা মেলার আগেই মাশরাফি জানিয়ে দিলেন তার টেস্টে ফেরার সম্ভাবনা জিরো পার্সেন্ট। কারণ একেতো ইনজুরি নিয়ে খেলছেন ক্রিকেটের সীমিত ওভারের ফরমেটে। তার ওপর দীর্ঘদিন হয় না চারদিনের ম্যাচ খেলা। তাই নিজেকে তিনি টেস্টের জন্য প্রস্তুতই ভাবছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় টেস্টে খেলার সম্ভাবনা জিরো পার্সেন্ট। প্রথমত, সবকিছুরই একটা প্রক্রিয়া থাকে। আমাকে কিছু চারদিনের ম্যাচ খেলতে হবে, তা ছাড়া আমি যে টেস্টের জন্য ফিট, এটাও প্রমাণ করার বিষয় থাকে। নিজের কাছেও বুঝতে হবে, কেমন করছি, না করছি। এইগুলো আসলে না হওয়া পর্যন্ত আমি বলতে পারি না যে খেলতে চাই। সেটা বললে হয়তো অন্যায় হবে।’
২০০৯ সালে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এরপর তার আর সাদা পোশাকে মাঠে নামা হয়নি। বেশ কয়েকবার ফেরার চেষ্টা করলেও নিজেকে টেস্টে খেলার জন্য উপযুক্ত মনে করেননি ইনজুরির কারণে। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব দিয়ে একের পর এক সাফল্য এনে দিয়েছেন এই অধিনায়ক। এই সময় তার নেতৃত্বে দলের পেস আক্রমণ হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর। কিন্তু টেস্টে পেস বিভাগ এখনো দেখেনি আলোর মুখ। দলের ব্যাকআপ খেলোয়াড় নিয়ে মাশরাফি বলেন, এখন আমরা মনে করি বা প্রায়ই শুনি আমাদের ব্যাকআপ ক্রিকেটার অনেক। কিন্তু আমি আসলে ব্যাকআপ দেখি না। আমার চোখে ব্যাকআপ ক্রিকেটার নেই। আপনি যদি সাকিবের বদলি কাউকে খেলাতে চান, পাবেন না। তামিমের ক্ষেত্রেও তাই। শফিউল খুব ভালো ফর্মে ছিল। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য এবং একটি প্লেয়ারের জন্যও খারাপ। তবে আমাদের ব্যাকআপ তৈরি হচ্ছে। ওই পর্যায়ে আসতে সময় লাগবে। এই মুহূর্তে ইনজুরিগুলো আমাদের ভাবায় আর যারা টপ ফর্মে আছে তাদের ইনজুরিগুলো দলে খুবই প্রভাব ফেলে।’
দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারের ইনজুরি একটি দলের উপরে কতটা বাজে প্রভাব ফেলতে পারে তার উদাহরণ মাশরাফি দিলেন তরুণ পেসার মোস্তাফিজকে দিয়ে। তিনি বলেন, ‘মোস্তাফিজের ইনজুরিটা আমাদের দলের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কেননা সে ইনজুরিতে না থাকলে আমরা হয়তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুইটা টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারতাম। এই জায়গাগুলোতে আমাদের সেরা প্লেয়ারদের ঠিক থাকা খুব জরুরি।’
নিউজিল্যান্ড সিরিজ হবে কঠিন চ্যালেঞ্জের
দুই বছর পর বিদেশের মাটিতে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে শেষ দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলেছিল টাইগাররা। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছে ৬ বছর পর। ২০১০ সালে ব্ল্যাকক্যাপদের বিপক্ষে শেষ সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। যদিও গত বছর নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৫ টেস্ট, ৭ ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বংলাদেশ। কিন্তু কোনোটিতে জয় আসেনি। তবে দেশের মাটিতে টাইগাররা গত দুই বছরে ধারাবাহিকভাবে সফল। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেও দারুণ ঝলক দেখিয়েছে। তাই নিউজিল্যান্ড সিরিজেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় টাইগাররা। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে সেই সাফল্য ধরে রাখা যে ভীষণ কঠিন তা সকলেরই জানা। সফরে যাওয়ার বিষয়টি মনে করে দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজাও। তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের জন্য যেমন আমাদের কন্ডিশনে খেলা কঠিন তেমনি ওদের কন্ডিশনে আমাদের জন্য খেলা কঠিন। কারণ ওখানে সবকিছুই আলাদা। তারপরও আমরা সবগুলো ম্যাচ জিততেই খেলবো। তবে এটা করা কঠিন। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি ওখানকার নতুন কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে যতটা করা যায়। তবে আমি মনে করি কঠিন চ্যালেঞ্জই হবে আমাদের।’
তবে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে বাংলাদেশ দলকে মানিয়ে নিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অস্ট্রেলিয়াতে ১০ দিনের একটি ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেছে। এরই মধ্যে বিসিবি ঘোষিত ২২ সদস্যের প্রাথমিক দল থেকে মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে ১৩ জন ক্রিকেটার বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া গেছেন। আজ আরো ১০ জন ক্রিকেটার মাশরাফির নেতৃত্বে দেশ ছাড়বেন। ৯ জন যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে দলের সঙ্গে যোগ হয়েছেন মেহেদী মারুফ। সেখানে প্রস্তুতি শেষে নিউজিল্যান্ড যাবে দল। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের পরিবর্তে অস্ট্রেলিয়াতে প্রস্তুতি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। এই বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া আরো কঠিন। আমি মনে করি, এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে। গত দুই বছরে আমরা যেভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছি। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে হবে। ভালো খেলার স্মৃতি নিয়ে ওখানে খেলতে পারলে আশা করি নিউজিল্যান্ড সফর ভালো হবে। তার আগে অস্ট্রেলিয়ায় ১০ দিনের ক্যাম্প আছে। এটা আমাদের জন্য ভালো। নিউজিল্যান্ডে হয়তো অনুশীলনের ব্যবস্থা করার সুযোগ হয়নি করতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো। অস্ট্রেলিয়াতে প্রস্তুতিও খুব খারাপ হবে না।’
অস্ট্রেলিয়াগামী দলে শেষ মুহূর্তে যুক্ত হয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে ব্যাট হাতে দারুণ চমক দেখানো ওপেনার মেহেদী মারুফ। তবে জানা গেছে দলে তাকে নেয়া হচ্ছে শুধু মাত্র অস্ট্রেলিয়াতে অনুশীলনের জন্য। সেখানে তাকে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে দেখবেন। এরপরই তাকে নিউজিল্যান্ডে নেয়া হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’