বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে জমজমাট ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ভোরের আলো ফুটতেই এদিন তরুণ-তরুণীরা একে-অপরের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েন ক্যাম্পাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিকালে তাদের স্রোত মেশে গ্রন্থমেলায়। গতকাল বিকালে মেলা ঘুরে দেখা যায়, পুরো মেলা প্রাঙ্গণে যেন মানুষের ঢল নেমেছে। তরুণীরা শাড়ি পরে, হাতে কাচের ছুড়ি, মাথায় ফুলের টায়রা দিয়ে সঙ্গীর হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বেলা ৩টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে মেলার প্রবেশপথে দেখা গেছে লম্বা লাইন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। বিকালের দিকে মেলা লোকারণ্য হয়ে ওঠে। রাত সাড়ে ৮টা মেলা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত মেলার ভেতর-বাইরে ছিল উপচেপড়া ভিড়। ভালোবাসা দিবসের কারণে মেলায় অন্যান্য দিনের চেয়ে বিক্রিও হয়েছে বেশ। ক্রেতাদের পছন্দের ক্ষেত্রে উপন্যাসই ছিল শীর্ষে। এর বেশির ভাগই কেনা হয়েছে ভালোবাসার মানুষকে উপহার দেয়ার জন্য। উপহার বিনিময়ে আনন্দে অবগাহন করেছেন যুগলরা। মুক্তচিন্তা প্রকাশের প্রকাশক শিহাব বাহাদুর বলেন, বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বেচাবিক্রি বেশ ভালো হয়েছে। এ দুই দিনই সবাই প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছে, বই কিনছে। এ দিনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভালোবাসার গল্প নিয়ে রচিত উপন্যাস আর কবিতার বই। এদিকে বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চাশ ও ষাট দশকের একুশের সংকলন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক ড. ইসরাইল খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন ও সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। প্রাবন্ধিক বলেন, ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে একুশের যেসব সংকলন প্রকাশিত হয় সেগুলো যেন বাংলার নবজাগরণের প্রথম প্রভাতে প্রকাশিত সাময়িকপত্রের ধারাবাহিকতাকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করে। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুধু রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার প্রতিষ্ঠাই নিশ্চিত করেনি একই সঙ্গে সাহিত্য-সংস্কৃতিমনা তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে গেছে অসামান্য উত্তাপ। এই উত্তাপেরই ফল হিসেবে আমরা গত শতেকর পঞ্চাশ ও ষাট দশকে অজস্র আগুনের ফুলের মতো অসংখ্য একুশের সংকলন প্রকাশিত হতে দেখি। বলাই বাহুল্য এইসব সংকলন কেবল ভাষা আন্দোলন, ভাষাশহীদ এবং অমর একুশের চেতনাকেই ধারণ করেনি, একই সঙ্গে স্বাধীনতামুখী সংগ্রামের বীজও বপন করে গেছে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ এবং তনুশা রহমান। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী খুরশিদ আলম, তপন চৌধুরী, জয় শাহরিয়ার, আফসানা রুনা, অঞ্জলি রায় চৌধুরী এবং আলবেরুনী অণু। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), সাহেদ সরকার বাপ্পী (প্যাড), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড) এবং শাহরাজ চৌধুরী (গীটার)।
এদিকে মেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে বিকালে পারভেজ আক্তারের ‘তুমি বরং অন্য কাউকে ভালবাস’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া মেলায় এসেছে লেখক সাদেক আহমেদ এর ‘দাঁড়াও পথিক’ এর চতুর্থ পর্ব, ‘মশা থেকে মশাই’।
নতুন বই: মেলার ১৪তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৪৬টি আর মোড়ক উন্মোচন করা হয় ২৩টি বইয়ের। নতুন বইয়ের মধ্যে গল্প ২২টি, উপন্যাস ২৫টি, প্রবন্ধ ৫টি, কবিতা ৪২টি, ছড়া ৫টি, শিশুসাহিত্য ৬টি, জীবনী ৩টি, মুক্তিযুদ্ধ ১২টি, ভ্রমণ ২টি, চি:/স্বাস্থ্য ১টি এবং অন্যান্য ১৮টি।
আজকের অনুষ্ঠান: আজ বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সমর সেনের জন্মশতবার্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান এবং কবি পিয়াস মজিদ। সভাপতিত্ব করবেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।