বিজেএমসিতে চাকরি করতেন আকবর আলী। মাস শেষে যা পেতেন তা দিয়েই চলতো জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠান থেকে আজ বড় তারকা হয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। ম্যারাথনের রানী মিরোনা কিংবা দেশ সেরা স্প্রিন্টার শিরিন আক্তার। এসব বড় তারকা তৈরি করা মানুষটি বিজেএমসি’র চাকরি হারিয়ে আজ নিঃস্ব। অর্থের অভাবে বন্ধ প্রায় তার তৈরি প্রতিষ্ঠানটিও। ২০০৬ সালে সাতক্ষীরার চালতেতলায় নিজের বাড়িতে আকবর আলী গড়ে তোলেন ‘জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’। তখন অনাবাসিক ছিল। মেয়েরা এসে খেলা শিখতো। পড়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে আসতো। ২০১২ সাল থেকে নিজের বাড়িতেই একটি বড় ঘর তুলে গড়ে তোলেন আবাসিক কার্যক্রম। বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষার্থী (মেয়ে ১১ জন এবং ছেলে ৩ জন) নিয়ে চলছে আকবর আলীর আবাসিক ক্রীড়াবিদ গঠনের কাজ। এই ক্রীড়াবিদরাই নিয়মিত ফুটবল ও অ্যাথলেটিকসে ঢাকায় এসে খেলে থাকে। এবারও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে আন্তঃজেলা অ্যাথলেটিকসে দল নিয়ে এসেছেন তিনি। গতকাল কথা হয় অন্তঃপ্রাণ এই ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে। সেখানে ফুটে উঠে তার আর্তনাদ। ‘সমাজে সুবিধাবঞ্চিত অনেক ছেলে মেয়েই ঘুরছে। আমি খুঁজে খুঁজে তাদেরকে বের করি। এদের অনেকের ভাঙা সংসার। কারো মা বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। আবার কারো বাবা তাদেরকে ছেড়ে গেছে। কারো কারো আবার মা-বাবা কেউই নেই। ফলে তারা বখে যায়। নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তাদেরকেই আমি তুলে আনি। নিজের বাড়িতে খাওয়া-পরা দিয়ে থাকার জায়গা করে দিই। এরপর ক্রীড়াবিদ হিসেবে গড়ে তুলি।’ আকবর আলীর দুই মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রিক্তা ও ফাতেমাতুজ জোহরা মুক্তা। দু’জনেই জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়। দু’মেয়ে ও বাবা তিনজনই বিজেএমসিতে চাকরি করতেন। যা পেতেন, তা দিয়েই ১৪ জন মেয়ের খোরপোষ চালাতেন। কিন্তু গত বছরের আগস্টে হঠাৎ করেই তিনজনের চাকরি চলে যায় একসঙ্গে। এতেই বিপাকে পড়ে যান তিনি। ছেলে-মেয়েদের খাওয়ার জোগাড়ে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। তার কথায়, ‘কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সফিকুল ইসলাম এক মাসের খাবার খরচ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরমধ্যে আমাদের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাহেবের কাছেও গিয়েছি। উনি ৩০ হাজার টাকা দেয়ার কথা জানিয়েছেন। চাকরি হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব। মেয়েদের খাওয়ার যোগাড় করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। যদি আরও বিত্তবানরা এগিয়ে আসতেন, তাহলে আমি দেশকে ভালোমানের ক্রীড়াবিদ উপহার দিতাম।’ নিজে ফুটবল ও অ্যাথলেটিকস খেলেছেন। তাই ক্রীড়াবিদ গঠনে ব্রত নিয়েছেন আকবর আলী। এমন অন্তঃপ্রাণ সংগঠকদের বড়ই অভাব।