সরকার টিকিয়ে রাখতে উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক দল ডিইউপি’র সঙ্গে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে চুক্তি করলে তা দেশটির শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের আরেক দল সিন ফেইনের নেতারা এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। বৃহস্পতিবার তেরেসা মের সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রখ্যাত আইরিশ নেতা গেরি অ্যাডামস বলেন, তিনি মে’কে বলেছেন ডিইউপি’র সঙ্গে সরকার গঠনের চুক্তি হলে তা হবে ‘গুড ফ্রাইডে চুক্তি’র লঙ্ঘন। গুড ফ্রাইডে এগ্রিমেন্ট নামে একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমেই ইংল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৩০ বছরব্যাপী প্রাণঘাতী সংঘাতের অবসান ঘটে। সিএনএন’র খবরে বলা হয়, বিপর্যয়কর নির্বাচনী ফলের পর বৃটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। ফলে সরকার গঠনে যুজতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। অগত্যা তিনি উ. আয়ারল্যান্ডের কড়া দক্ষিণপন্থি ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি)-এর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা চালান। কিন্তু গুড ফ্রাইডে চুক্তি মোতাবেক, ডিইউপির মতো ইউনিয়নিস্ট দলগুলো এবং সিন ফেইনের মতো আইরিশ জাতীয়তাবাদী দলগুলো ক্ষমতা ভাগাভাগি করে সরকার গঠন করে। চুক্তি মোতাবেক উত্তর আয়ারল্যান্ডে সরাসরি শাসনের অবসান ঘটে যুক্তরাজ্য সরকারের। যুক্তরাজ্য সরকার এ ইউনিয়নিস্ট ও জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর
ভূমিকায় থাকবে বলে চুক্তিতে অভিপ্রেত হয়। কিন্তু এখন ডিইউপির সঙ্গে চুক্তি করে বৃটিশ সরকার গঠিত হলে, তা চুক্তির এই নিরপেক্ষতার লঙ্ঘন হতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। পাশাপাশি, উ. আয়ারল্যান্ড শান্তি প্রক্রিয়া ও চুক্তি হুমকিতে পড়তে পারে। উ. আয়ারল্যান্ড বিষয়ক সাবেক লেবার দলীয় প্রতিমন্ত্রী পিটার হেইন বলেন, ‘সরকারের মধ্যে একধরনের অক্ষমতা রয়েছে। উত্তর আয়ারল্যান্ড নিয়ে এ সরকারের জানার অভাব রয়েছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক।’ সাবেক কনজারভেটিভ দলীয় প্রধানমন্ত্রী জন মেজরও একই কথা বলেছেন। তিনি এ সপ্তাহের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মে’কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ডিইউপির সঙ্গে চুক্তি করলে তা ভঙ্গুর শান্তিপ্রক্রিয়াকে হুমকিতে ফেলবে। উল্লেখ্য, উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক অবস্থাও বর্তমানে বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। গুড ফ্রাইডে এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী সিন ফেইন ও ডিইউপিসহ জাতীয়তাবাদী ও ইউনিয়নিস্ট দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে সরকার গঠনের কথা। কিন্তু জানুয়ারিতে বর্তমান ডিইউপি নেতা আর্লিন ফোস্টারের দুর্নীতি কেলেঙ্কারির জেরে সরকার থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে সিন ফেইন। ফলে গত ৫ মাস ধরে কার্যত সরকারবিহীন অবস্থায় রয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড। এমন অবস্থায় ডিইউপির সঙ্গে জোট করে বৃটিশ সরকার গঠন করলে তা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করবে বলে অনেকে মত দিচ্ছেন।