সাব্বির রহমান রুম্মান জাতীয় দলের অন্যতম প্রতিভাবান ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরমেটে। এ পর্যন্ত ৩১ ম্যাচে ২৮.৮৪ গড়ে করেছেন ৭২১ রান। হাঁকিয়েছেন ৩ ফিফটি। একই বছর ওয়ানডেতেও অভিষেক হয় তার। ৪৩ ম্যাচে ৫ ফিফটিতে ২৬.৭৬ গড়ে ৯১০ রান। এরপর গেল বছর টেস্ট অভিষেক। ৬ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে ৩৩.০০ গড়ে ৩৩০ রান। মূলত জাতীয় দলের ব্যাট হাতে তার পজিশন শুরুতে ছিল সাত, আট নম্বরে। ধীরে ধীরে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ফরমেটে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়েছেন তিনি। এখন খেলেন ৩ নম্বরে। শেষ চার ম্যাচে দলের জন্য অবদান মাত্র ৫৮ রান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাকে সুপার ফ্লপই ধরা হচ্ছে। কেউ বলছে তাকে তিনে খেলানো ঠিক নয়, কেউ বলছে মানসিক সমস্যাতে ফর্মে নেই, আবার কেউবা বলছে ব্যক্তিগত জীবনে উচ্ছৃঙ্খলাই তার অবনতির কারণ! সাব্বিরকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। ফেসবুকে তো তাকে নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঝড়। যে কারণে বেশ বিরক্তই তিনি। এমনকি এ কারণে এড়িয়ে চলতে চাইছেন সংবাদ মাধ্যমকেও। তবে তুলে ধরেছেন নিজের ক্ষোভ, আশা, হতাশা, লক্ষ্য ও এগিয়ে যাওয়ার কথা। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: ত্রিদেশীয় সিরিজ ও ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন কেমন কাটলো?
সাব্বির রহমান: যদি দলের দিক থেকে বলি তাহলে অসাধারণ। আমরা নিউজিল্যান্ড দলকে দুইবার হারিয়েছি এই সফরে। এছাড়াও প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলাও অনেক বড় বিষয়। সেই হিসেবে বলবো দারুণ হয়েছে। আর আমার কথা যদি বলেন, বলবো সুপার ফ্লপ। যেমনটা অবদান রাখার দরকার ছিল রাখতে পারিনি।
প্রশ্ন: নিজের পারফরম্যান্সের অবনতির কারণ কী মনে করেন?
সাব্বির: আমি কি বলবো, ফেসবুকে তো বিশেষজ্ঞরা লিখে দিয়েছে। সংবাদপত্রও কম লিখছে না। সবাইতো আমাকে নিয়ে সব লিখে দিচ্ছে, এখনতো আমিই নিজের সম্পর্কে পড়ে পড়ে জানছি। কেউ বলছে, আমার মানসিক সমস্যা, কেউ বলছে আমার টেকনিকে সমস্যা, কেউ বলছে আমার তিনে খেলা ঠিক হচ্ছে না। এমনকি আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কথা কম নয়। এত কথা হচ্ছে, কারণ খারাপ করলে কথা তো হবেই। আমিতো বলবো ভালো-মন্দ মিলিয়েই ক্রিকেটারের জীবন। এখন হয়তো সময়টা খারাপ যাচ্ছে তাই এমনটা হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনার প্রিয় ব্যাটিং পজিশন কোনটি?
সাব্বির: আমি নিজে তিনে খেলতে পছন্দ করি। কিন্তু এখন থেকে আর বলবো না। যে বিশেষজ্ঞ যেভাবে বলবে আমি সেই পজিশনেই খেলবো। এতে খারাপ হোক আর ভালো।
প্রশ্ন: আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড সফরে আপনার অর্জন কী?
সাব্বির: আমার ব্যক্তিগত অর্জন নেই। কিন্তু প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলতে পারাটাই বলবো আমার সেরা অর্জন। কারণ একটি আসরে সেমিফাইনালে খেলার যে প্রেসার সেটা শেখাওতো অনেক বড় বিষয়। সামনে এই অভিজ্ঞতা বেশ কাজে দিবে বলেই মনে হয়।
প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ে উন্নতির জন্য কি কাজ করছেন?
সাব্বির: কাজতো করছি অবশ্যই, তা এখনই বলতে চাই না। অবশ্যই আমার ব্যাটিংয়ের উন্নতির জন্য কিছু করতে হবে। তবে আমি মনে করি আমার ব্যাটিং যথেষ্ট ঠিক আছে। শুধু সময়টাই খারাপ যাচ্ছে। তাই এখন ব্যাটিংয়ের চেয়ে বেশি মন দিতে চাই বোলিংয়ে। কারণ যে যাই বলুক না কেন আমি জানি যে আমার ব্যাটিংয়ে খুব বড় কোনো সমস্যা নেই। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দলের বোলিংয়ে অবদান রাখতে চাই।
প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অনেক তারকা ক্রিকেটাররা ছিলেন। তাদের কারও সঙ্গে কথা হয়েছে ?
সাব্বির: না, তেমন কারো সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। আসলে আমাদের এত সময়ও হয় না। তবে ইচ্ছে ছিল কথা বলার।
প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ের সমস্যা নিয়ে কি আলাদা ভাবে কোনো কোচের সঙ্গে কাজ করবেন?
সাব্বির: না, ক্যাম্প শুরু হলে সেখানেই নিজের উন্নতির জন্য কাজ করবো।
প্রশ্ন: সামনে লক্ষ্য কী?
সাব্বির: অস্ট্রেলিয়া আসছে বাংলাদেশ সফরে। আমি চাইছি এমনভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে যেন টেস্ট দলে নিয়মিত জায়গা করে নিতে পারি। এটাই এখন আমার এক মাত্র লক্ষ্য। কারণ ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে অবশ্যই টেস্টে ভালো করতে হবে। সেটি ব্যাটিং হোক আর বোলিং হোক।
প্রশ্ন: ক্রিকেট জীবন নিয়ে পরিবারের ভূমিকা কেমন?
সাব্বির: আমার পরিবার ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা কিছু বলছে না। আমি এতদিন পর রাজশাহী এসেছি তো আমাকে পেয়েই তারা বেশ খুশি আছে। সবার জন্য উপহার এনেছি। আম্মু-আব্বু, ভাই-বোন, ভাবি সবার জন্য কিছু না কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। এখন সবার সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাবো। এরপর আবার ক্রিকেটে ফিরবো।