মো: আকরাম খাঁন: মনির খানকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে জনপ্রিয় এ কণ্ঠশিল্পী ছোটবেলা থেকেই সংগীতের পাশাপাশি মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ নিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া মনির খান মো. মাহবুব আলী খান এবং মোছা. মনোয়ারা খাতুন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। পারিবারিকভাবে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে না উঠলেও কলেজ জীবনেই সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন।
১৯৮৯ সালে কোটচাঁদপুর কে.এম.এইচ. ডিগ্রি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়েছিল। সেই কমিটিতে মনির খান সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৯১ সালে চলে আসেন ঢাকায়। গানের পাশাপাশি বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কার্যকরী সদস্য হিসাবে রাজনীতি শুরু করেন। ২০০৮ সালে বিএনপির কাউন্সিলের পর দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এবং জাসাসের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মহেশপুর-কোটচাঁদপুরে বিএনপির জন্য কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিরেন। এরপর থেকেই তিনি মাঠে নামেন। ৩ বার জাতীয় পুরষ্কার পাওয়া এই কণ্ঠশিল্পী গানের পাশাপাশি রাজনীতির মাঠেও সক্রিয়। তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত পরিকল্পনা, বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর নিয়ে স্বপ্নের কথা বলেছেন পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের সঙ্গে। তার সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মনির খান বলেন, বর্তমান সময়টা স্বাধীনতা প্রকাশের ক্ষেত্রে সুস্থ সময় নয়। মুক্তভাবে মতও প্রকাশ করা যাচ্ছে না। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হওয়ার পরও বিএনপিকে জনসভা করতে দেয়া হচ্ছে না। বিএনপি চেয়ারপারসন ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনিপর জাতীয় নেতারা জনসভা করতে পারছেন না। এটা কখনোই কাম্য হতে পারে না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে মনির খান বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বির্তকিত নির্বাচনে বিএনপি কেন অংশ নেয় নি, সেটা নিয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারবো না। কারণ বিষয়টা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াই ভালো জানেন। তবে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। সাংগঠনিকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্দেশ দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র নেতা এবং আমাদের মতো মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এলাকায় গিয়ে দলের জন্য কাজ করার জন্য। তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে, প্রায় ৯ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। সেই সঙ্গে ছিল সমন্বয়হীনতা। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশের পর বিএনপিতে এখন সমন্বয়ের ছোঁয়া লেগেছে। আমি মনে করি আগামীকাল বা যেকোনো মুহুর্তে যদি নির্বাচন হয়, ব্যালট বিপ্লবে বিএনপি জয়ী হয়ে আসবে।
বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ তে উল্লেখ করেছেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি থাকবে না। বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন এমন প্রশ্নের জবাবে সদালাপী মনির খান বলেন, রাজনীতিবিদদের সুস্থ মানসিকতা এবং সদিচ্ছাই পারে প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করতে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমার মতো একজন কণ্ঠশিল্পীকে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার, শিল্পকলা, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আল্লাহ আমাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশের মানুষ সেটা পাচ্ছে না। একই কারণে আমাকে সরকারি চাকরিটাও হারাতে হয়েছিল। আমি মনে করি, সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রে এ ধরণের প্রতিহিংসা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। যদি আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে, এ প্রতিহিংসার ধারা আমরা বন্ধ করবো।
আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতির বিষয়ে মনির খান বলেন, শুধু মহেশপুর-কোটচাঁদপুরেই নয়; সারাদেশের মানুষ একটা পরিবর্তনের আশায় রয়েছেন। আমি নিজেকে নির্বাচনের জন্য ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ মতো, তৃণমূলকে সংগঠিত করার কাজটি আমি নিজ দায়িত্বে খুব ভালোভাবে করতে পেরেছি। মহেশপুর-কোটচাঁপুর বিএনপিতে বর্তমানে কোনো কোন্দল নেই। ৫ বছর আগেও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় এবং পরবতীতে তিনি শাহাদাৎ বরণ করায় নেতৃত্ব কিছুটা এলোমেলো থাকলেও সেগুলো গুছিয়ে আনা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে নেতাকর্মীদের কাছাকাছি গিয়ে তাদের কথা শুনি। ২০০৮ সালের পর থেকে আমি নিয়মিত এলাকার মানুষের কাছে যাচ্ছি। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হচ্ছি। এই সময়টাতে আমি এলাকার মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছি। খুব শান্তি পাই, যখন তৃণমূলের সবাই বিএনপির জন্য একই সুরে কথা বলেন। ঈদের সময় ৯টি জনসভা করেছি এলকায়। বাংলাদেশের অন্য কোথাও বিএনপি মাইক ব্যবহার করে হাজার হাজার লোক নিয়ে জনসভা করতে না পারলেও মহেশপুর-কোটচাঁদপুরে অবস্থা ভিন্ন। এলকার লোকজন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। বর্তমানে মহেশপুর-কোটচাঁদপুরের বিএনপি চাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে।
নিজ এলাকার মানুষের জন্য সব সময়ই কাজ করতে চান মনির খান। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি হতে পারলে প্রথমেই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দলমত নির্বিশেষে তরুণদের মুক্তি দিতে কাজ করবেন। এ বিষয়ে এখনই তিনি কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এলাকায় কলকারখানা স্থাপনও করতে চান তিনি।