রত্না
একটা সময়ে ঢাকাই সিনেমায় সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন এ নায়িকা। তবে তা খুব বেশি দিনের জন্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। চলচ্চিত্রের কাজ কমে যাওয়ায় ছোটপর্দায়ও কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু এ মাধ্যমেও ততটা সফলতা অর্জন করতে পারেন নি। বর্তমানে অভিনয় জগত থেকে সম্পূর্ণ দূরে রয়েছেন এই অভিনেত্রী। ব্যাবসায় মনোযোগী হয়েছেন তিনি। তামান্না ফিল্মস নামে একটি প্রযোজনা সংস্থাও গড়ে তুলেছেন রত্না। সেখান থেকে সর্বশেষ ‘সেদিন বৃষ্টি ছিল’ নামের একটি ছবি মুক্তি দেয়া হয়। সেখানেও নায়িকা ছিলেন তিনি। কিন্তু সিনেমাটিতে কোনভাবেই আলোচনা তৈরি করতে পারেন নি রত্না।
শাকিবা
চিত্রনায়িকা শাকিবা বিনতে আলী। এখনো পর্যন্ত তার অভিনীত প্রায় ৪০টির বেশি ছবি মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু প্রায় ৭ বছর ধরে চলচ্চিত্র থেকে দূরে রয়েছেন একসময়ের সুপারহিট এই চিত্রনায়িকা। শাকিবার অভিষেক হয়েছিল মমতাজুর রহমান আকবরের ‘জীবনের গ্যারান্টি নাই’ ছবির মাধ্যমে। আমিন খানের বিপরীতে প্রথম ছবিই সুপারহিট হয়। এরপর অনেকগুলো ছবিতে কাজ করেছেন শাকিবা। যেমন- ‘ভন্ড নেতা’, ‘বাঁচাও দেশ’, ‘ মাঝির ছেলে ব্যারিস্টার’, রূপান্তর, দুর্ধষ’, ‘বস্তির ছেলে কোটিপতি’, ‘এক জবান’, ‘মাটির ঠিকানা’ ইত্যাদি।
লিমা
১৯৯৪ সালের শেষের দিকে জীবন রহমান পরিচালিত ‘প্রেম যুদ্ধ’ ছবিতে সালমানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লিমা। পরের বছর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘কন্যাদান’ ছবিতেও দেখা যায় এই জুটিকে। কিন্তু চিত্রনায়িকা লিমা পরে একেবারেই হারিয়ে যান চিত্রজগত থেকে।
সাহারা
২০০৪ সালে ‘রুখে দাঁড়াও’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে আত্মপ্রকাশ সাহারার। একসময় অশ্লীলতার তকমা গায়ে জড়িয়েছিলেন তিনি। মাঝে ভালো কিছু ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে কিছুটা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কারও করে নিয়েছিলেন সাহারা। ২০০৬ সালে শাকিব খানের বিপরীতে ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ চলচ্চিত্রটি বেশ ভালো ব্যবসা করেছে। ঢালিউডে শিল্পী সংকট উত্তরণে যথেষ্ট ভূমিকা রেখে এগোচ্ছিলেন এই নায়িকা। কিন্তু ২০১৩ সালে এক চিত্রপ্রযোজককে গোপনে বিয়ে করে চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে যান সাহারা। বর্তমানে পুরোদস্তুর সংসারী এই অভিনেত্রী।
কেয়া
চলচ্চিত্রের আরেকজন গ্ল্যামারগার্ল কন্যা কেয়া। সিনেমায় এসে বেশ আলোচনা তৈরি করেছিলেন তিনি। আজ তিনি নেই। হারিয়ে গেলেন অন্যদের মতন। কালেভাদ্রে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও ঘুরে দাড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন কেয়া। গত ঈদে টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবে সেটাও আলোচিত হয়নি। তিনিও পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
শিল্পী
১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল- এই পাঁচ বছরে ৩৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দর্শকনন্দিত নায়িকা শিল্পী। তার পুরো নাম আঞ্জুমান আরা শিল্পী। মোহাম্মদ হোসেন প্রযোজিত রানা নাসের পরিচালিত ‘প্রিয়জন’ চলচ্চিত্রের কথা মনে করিয়ে দিলেই খুব সহজেই দর্শক এই শিল্পীকে মনে করতে পারেন। কারণ তিনি প্রয়াত অমর নায়ক সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন এতে। দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেও ২০০০ সালে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন শিল্পী। তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ চলচ্চিত্র দুটি হচ্ছে নায়করাজ রাজ্জাকের ‘প্রেমের নাম বেদনা’ এবং দেওয়ান নজরুলের ‘সুজন বন্ধু’। বহু নাটকেও অভিনয় করেন এ অভিনেত্রী। বর্তমানে অভিনয় ছেড়ে সংসার এবং দুই সন্তান ছেলে সানাদ ও মেয়ে অ্যাঞ্জেলিনাকে নিয়েই ব্যস্ত নায়িকা শিল্পী।
মুক্তি
অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে মুক্তি। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘হাছন রাজা’ ও ‘চাঁদের আলো’ সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একটা সময়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন তিনি। শোনা গেছে তার মায়ের অভিনীত কিছু বিখ্যাত সিনেমা যেমন ‘শুভদা’, ‘দেবদাস’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমাগুলো রিমেক করবেন মুক্তি। ছবিগুলোতে তিনি নিজেই অভিনয় করবেন।
সোনিয়া
নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই সিনেমার অন্যতম ব্যস্ত নায়িকা ছিলেন সোনিয়া। পঞ্চাশটির অধিক সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন এ অভিনেত্রী। যার মধ্যে বেশ কিছু সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছে। সালমান শাহ, বাপ্পারাজ, রিয়াজসহ প্রথম সারির নায়কদের বিপরীতে অভিনয় করেছেন সোনিয়া। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি নাটকেও অভিনয় করতেন। একটা সময়ে এসে হারিয়ে যান মিডিয়া থেকে। প্রায় দশ বছর ধরে মিডিয়ার বাইরে এই নায়িকা। তিনি এখন লন্ডন প্রবাসী। কয়েক বছর আগে বিয়ে করে প্রবাসী স্বামীর হাত ধরে লন্ডনে পাড়ি জমান সোনিয়া। সেখানকার নাগরিকত্বও পেয়েছেন। বৈবাহিক জীবনে সোনিয়া তিন সন্তানের জননী। ১৯৯১ সালে ‘মাস্তান রাজা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সোনিয়ার চলচ্চিত্র অভিনয় শুরু। এরপর প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাকের নির্দেশনায় বাপ্পারাজের বিপরীতে ‘প্রেম শক্তি’ ছবিতে প্রথম নায়িকা চরিত্রে কাজ করেন তিনি। তার সর্বশেষ অভিনীত দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুড় বাড়ি জিন্দাবাদ’ ছবিটি। এরপর আর নতুন কোনো ছবিতে তাকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।
অন্তরা
২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অন্তরার মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছিল পরিবারের পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে অন্তরার স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেছিলেন মা আমেনা খাতুন। ২০১৫ সালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে অন্তরাকে হত্যার অভিযোগ এনে পিটিশন মামলা করেন অন্তরার মা। এরপর তার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে মামলার কোন আগ্রগতি পরবর্তীতে জানা যায় নি। মূলত শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু তার। এরপর তিনি নায়িকা হিসেবে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। এসবের মধ্যে ‘প্রেমের কসম’, ‘লেডি র্যাম্বো’ , ‘আমার মা’, ‘দোলন চাঁপা’, ‘শয়তান মানুষ’, ‘ফজর আলী আসছে’ ও ‘নাগ নাগিনীর প্রেম’ উল্লেখযোগ্য।
সিমলা
প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত সিমলা। আলেকজান্ডার বো এর বিপরীতে ‘ম্যাডাম ফুলি’ সিনেমার জন্য সে বছরই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এরপর বেশকিছু প্রশংসিত সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন সিমলা। কিন্তু একটা সময় তিনিও হারিয়ে গেলেন। সর্বশেষ ‘নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। কিন্তু ছবিটি হয় আবার হয়না। তবে আগের মত আর ফেরার সম্ভাবনা নেই এই নায়িকার। আমেরিকা টু বাংলাদেশে যাতায়াতের মধ্যেই আছেন তিনি।
এছাড়াও হারিয়ে যাওয়ার তালিকায় আছেন রেসি, শ্যামা, একা, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি সহ আরো অনেকে। এরা সিনেমায় এসে কোনো না কোনো সময়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন। আবার কোথায় যেন হারিয়েও গেছেন।