ব্যাঙ্গালোরে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চের সেই ম্যাচটা এখনো পোড়ায় টাইগারদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ওই ম্যাচে মুশফিকুর রহিম তিন বল বাকি থাকতেই জয়ের আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিলেন। শেষ তিন বলে বাংলাদেশ যে দুটি রান নিতে পারবে না সেটা কি কেউ ভেবেছিলেন?
গ্রিক ট্র্যাজেডির প্রতিচ্ছবিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের হাহাকারের এক উপাখ্যান। হার্দিক পান্ডিয়ার শেষ তিন বলে তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের হার এক রানে। আরো এক মার্চে এসে সেই বাংলাদেশ ও ভারতের লড়াই। নিদাহাস ট্রফির দ্বিতীয় ম্যাচে আজ বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হবে এই দুটি দল। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।
এই দুই বছরের মধ্যে ওয়ানডে ও টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের তারপরই এই দল দুটোর প্রথম সাক্ষাৎ। সেদিনের সেই ম্যাচে ভারতের জয়ের নায়ক রবিচন্দ্রন অশ্বিন, পান্ডিয়া-এমএস ধোনিরা থাকছেন না বৃহস্পতিবারের ম্যাচে। তবে বাংলাদেশের ট্র্যাজেডির নায়কেরা মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুররা ঠিকই আছেন। গত কয়েকবছরে দুই দেশের ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টা একটা সম্পূর্ণ আলাদা উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।
আর তাই রাবনের দেশে নিদাহাস ট্রফিতে আরো একটি লড়াইয়ের আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। তাহলে কি ব্যাঙ্গালোরে সেই হারের প্রতিশোধ প্রেমাদাসায় নিতে পারবে বাংলাদেশ?
তবে এরআগে পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ ও ভারতের টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখিতে কোনো সুখবর নেই বাংলাদেশের। পাঁচবারের মুখোমুখিতে সবকটিতেই হেরেছেন মুশফিকরা। আগের ম্যাচের স্মৃতিগুলো ভুলে যেতে চান মাহমুদউল্লাহরা। ভুলে যেতে চায় বাঙ্গালোর ম্যাচের হাতাশাটাও। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বলেন, বাঙ্গালোরের ম্যাচ তো ওখানেই শেষ। ক্রিকেটে দুর্ঘটনা হতেই পারে। একটা ম্যাচ নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তবে ওই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নেয়াটা জরুরী। সেটা কাজে লাগাতে পারলে ভালো কিছু হবে।
অনেকেই মনে করছিলেন খেলতে পারবেন না, কয়েকদিন থাকতেও পারবেন না সাকিব আল হাসান-তাহলে শুধুশুধু শ্রীলংকায় গিয়ে লাভ কি? তবে নিয়মিত অধিনায়ককে কাছে পেয়ে বাংলাদেশও নাকি উজ্জিবীত। বাংলাদেশ সেরা খেলোয়াড়কের হারিয়ে আগে থেকেই কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল। তবে শ্রীলংকায় গিয়ে আত্মবিশ্বাস জোগানোর মতোও অনেক কিছু পেয়েছে বাংলাদেশ। সফরগুলোতে সাধারণত প্র¯‘তি ম্যাচে বাংলাদেশের তেমন একটা ভালো করতে দেখা যায় না।
সেখানে শ্রীলংকা ক্রিকেট প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে ৪১ রানের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েরও ভালো করে দেখিয়েছেন পেসাররা।
বিশেষ করে জোরে বল করতে পারা তাসকিস ও রুবেল হোসেনকে দারুন ছন্দে দেখা গেছে। মঙ্গলবার শ্রীলংকায় দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সাকিব। কাল অনুশীলনের সময় ছিলেন দলের সঙ্গেও। তবে আজ ম্যাচের আগেই অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার কথা ছিল তার।
বাংলাদেশের আরেকটি অনুপ্রেরনা হতে পারে শ্রীলংকা। মঙ্গলবার নিদাহাস ট্রফিতে প্রথম ম্যাচে তারা রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে ভারতকে। ভারত দলের তাদের নিয়মিত খেলোয়াড় নেই অনন্ত পাঁচজন। এইতো সুযোগ ভারতকে হারানোর। সাকিব না থাকলে যেকোনো ফরম্যাটেই বাংলাদেশের টিম ম্যানেচমেন্টের জন্য একাদশ গঠন করতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হয়। শ্রীলংকা সফরের তার পরিবর্তে দলে দু’জনকে নেয়া হয়েছে।
তবে টিম ম্যানেজমেন্টের বড় চিন্তা এখনো লিটন কুমার দাস ও সাব্বির রহমানকে নিয়ে। এক সময়ে টি ২০ খেলোয়াড় হয়ে যাওয়া সাব্বির রহমান বেশকিছুদিন ধরে ফর্মে নেই। আবার লিটনের পারফরম্যান্স তাকে একাদশে জায়গা দেয়ার দাবি করে রেখেছে। তাই আলোচনা তিন নম্বরে খেলবে কে? সর্বশেষ শ্রীলংকার বিপক্ষে সিলেটে এবং মঙ্গলবার প্রীতি ম্যাচে সৌম্য সরকার শুন্য করে আউট হলেও ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী সৌম্যই থাকবে।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বলেই পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে তাসকিন আহমেদ ও রুবেল একাদশে জায়গা পেতে পারেন। আর বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে নাজমুল ইসলাম অপুর জায়গা প্রায় পাকা।
এদিকে এক গাদা তরুন ক্রিকেটার নিয়ে নিদাহাস ট্রফিতে খেলতে যাওয়া ভারত নিশ্চই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে হারের পর তাদের দল নিশ্চই আরো বেশি তেতে আছে। অথচ টুর্নামেন্টে তারাই ফেভারিট হিসেবে এসেছে। তবে শ্রীলংকা যেভাবে ভারতকে হারিয়েছে সেটা থেকেও কিছু শিক্ষা নিয়ে সেটা মাঠে প্রয়োগ করতে পারেন রোহিত শর্মারা।