গতকাল ১ জুলাই , লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইউরোপে বাঙালিদের সর্ব বৃহৎ উৎসব ,লন্ডন বৈশাখি মেলা। বাঙালি অধ্যূষিত টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের আয়োজনে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় এই লন্ডন বৈশাখি মেলা। শুধু ইংল্যান্ড নয়, পুরো ইউরোপ থেকেই বাংলাদেশিরা এই মেলায় এসে যোগ দেন।
ব্রিকলেনের বাক্সটন স্ট্রীট থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। টাওয়ার হ্যামলেটসের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে শোভাযাত্রা গিয়ে মিশে ওয়েভার্স ফিল্ডে। এরপরই মেলার মূল মঞ্চ থেকে ধারাবাহিকভাবে পরিবেশন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য দিয়ে বর্ণিল সাজে সজ্জিত দৃষ্টিনন্দন শোভাযাত্রা আকৃষ্ট করেছে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের। রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন, এবং উপভোগ করেছেন তাঁরা।
পুরো ওয়েভার্স ফিল্ড জুড়ে ছিল মেলার আয়োজন। নানা বয়সের মানুষ বর্ণিল সাজে এসে যোগ দিয়েছিলেন মেলায়। বাংলাদেশি খাবার দাবারের দোকানগুলো পশরা সাজিয়েছিল নানা রকম দেশি খাবারের।
মেলায় দর্শকদের মাতাতে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন ব্যান্ড দল চিরকুট। শিল্পী আশিক। লন্ডনের শিল্পীরা ও দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছেন। রনি মীর্জা ও নাদিয়ার প্রাণবন্ত উপস্থাপনা মাতিয়েছে হাজার হাজার দর্শককে। চায়না চৌধুরীরর তাল তরঙ্গ এবং শৌমি ডান্স কোম্পানির পরিবেশনায় ছিল নৃত্য। নাজ চৌধুরীর বেলি ড্যান্স ও তরুণদের আকৃষ্ট করেছে। লন্ডনের স্থানীয় কিছু সংগঠন মূল মঞ্চের বাইরে আলাদা ভাবে আয়োজন করেছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিদের জন্য ছিল কবিতা কর্ণার। সেখানে দিনব্যাপী ছিল কবিতা আবৃত্তি। ব্রিটিশ-বাংলা চেস এসোসিয়েশন বিশাল আকারের একটি দাবা সেট সামনে রেখে সাজিয়েছিলো তাদের স্টল। যা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
ব্রিটেনের মূল ধারায় কার্নিভাল হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই বৈশাখি মেলায় পুরো ইউরোপ থেকেই লক্ষাধিক মানুষ এসে মিলিত হতেন এই মেলায়। কিন্তু দিন দিন জনসমাগম কমছে এই মেলায়। কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী গত বছরের মেলায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এসে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের মেলায় জনসমাগম আর ও কম হবে বলে ধারণা করছেন সবাই। মেলায় আসা ব্যবসায়ীয়ারা একই ধারণা করছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় তাদের বিক্রি বাট্টা কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী।
ব্যাক্তিগত উদ্যাগে প্রায় ২০ বছর আগে চালু হওয়া মেলার কলেবর বৃদ্ধি পাওয়াতে স্থানীয় টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল সরাসরি মেলা পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এবারের মেলায় ও প্রায় তিন লাখ পাউন্ড বরাদ্ধ ছিল মেলার জন্য। কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল মেলাকে সফল করার।
ব্রাইটন থেকে কয়েক ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে এসেছিলেন নোমান আহাম্মেদ। তিনি জানান প্রতিবছরই মেলায় আসি বাংলাদেশের গন্ধটা নিতে। কিন্তু দিন দিন যেভাবে মানুষ কমছে একসময়ই না বন্ধই হয়ে যায় এই মেলা।
লোকসমাগম কমের জন্য অনেকেই দায়ী করছেন প্রচার প্রচারণার ঘাটতির বিষয়টিকে। প্রতিবছর কোনো না কোনো বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি মেলা সম্প্রচার করে থাকে। মেলায় আসা মানুষের পাশাপাশি কয়েক লাখ মানুষ টেলিভিশনের মাধ্যমে সেই মেলা উপভোগ করেন। এবার ছিলনা সরাসরি সম্প্রচার। বঞ্চিত হয়েছেন লাখ লাখ ইউরোপীয়ান বাংলাদেশি।
মেলায় উপস্থিত ছিলেন, মেয়র জন বিগস, স্থানীয় এমপি রুশনারা আলী, বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন, স্পিকার কাউন্সিলার আয়াছ মিয়া, ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলামসহ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের অধিকাংশ কাউন্সিলার, সাংবাদিক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।