ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভিআইপি, সিআইপি, পুলিশ কর্মকর্তা কাউকে আপনারা ছাড় দেবেন না। একজন পুলিশ সদস্য মাথায় হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালাবে, এটা হতে পারে না। আইনের রক্ষক হয়ে আইন ভাঙা যাবে না।’ আজ শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় চলমান ছাত্র আন্দোলনসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপির শীর্ষ এ কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি পুলিশ দায়িত্বের সঙ্গে কাগজপত্র পরীক্ষা করে তবে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। পুলিশ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবে না। তবে পুলিশ আগ বাড়িয়ে কোনো অপারেশনে যাবে না।’
আছাদুজ্জামান মিয়া আরো বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী ছাত্রদের ন্যায্য দাবিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। ছাত্রদের আন্দোলন যৌক্তিক। আমরা তাদের আন্দোলনকে স্যালুট জানাই।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ সারারাত ডিউটি করে বলেই আপনারা নিরাপদে ঘুমাতে পারছেন। অন্য চাকরিতে ডিউটি ঘণ্টা নির্ধারিত থাকলেও পুলিশের নির্দিষ্ট কোনো ডিউটি ঘণ্টা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদের সেবায় দিনরাত কাজ করছে।’
ডিএমপিপ্রধান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তারা আমাদের নৈতিকতা ও সাহসিকতার শিক্ষা দিয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কুচক্রী মহল ঢুকে পড়ে সহিংসতা করছে।’ নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি ছাত্রদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় কমিশনার আগামীকাল রোববার থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করেন। ট্রাফিক সপ্তাহে কেউ লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চালালে বা ট্রাফিক আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এর আগে আজ সকালে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের এই আইন মেনে চলতে নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি আরো বলেন, ‘এতোদিন পুলিশ সুযোগ পায়নি। এখন সুযোগ এসেছে, আইন প্রয়োগ করা হবে।’
গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনায় রাজপথে নেমে ৯ দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ড্রাইভার ও গাড়ির লাইসেন্স চেক করতে থাকে। অন্যান্য দিনের মতো আজও ঢাকায় এ অভিযান চালাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
কুর্মিটোলায় নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও পাঁচ লাখ টাকা করে দিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় বাস চলাচল একেবারেই কমে যায়। এমনকি আন্তজেলা বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার উচিত বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা বলেছেন, নিরাপদ বোধ না করা পর্যন্ত তারা রাস্তায় বাস নামাবেন না। ফলে অঘোষিত ধর্মঘট চলছে।