সকালে পিতলের ঘণ্টা বাজালেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান। সেই সঙ্গে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম প্রবেশ করে টেস্ট যুগে। নয়া ইতিহাসের আনন্দ নিয়ে শুরু হয়েছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টের প্রথমদিন। তাই প্রশ্ন ছিল, শেষ পর্যন্ত দিনটি কাটলো কেমন? বলার অপেক্ষা রাখে না সারাদিনই চলেছে ব্যাট-বলের দারুণ লড়াই। টসে হারলেও বল হাতে টাইগারদের সকালের শুরুটা ছিল দারুণ। অন্যদিকে দিনের শেষটা নিজেদের করে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। দিন শেষে তাদের স্কোর বোর্ডে যোগ হয় ২৩৬ রান। তবে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি টাইগাররা তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট।এরমধ্যে দু’জনই ফিফটি হাঁকানো ব্যাটসম্যান। যেখানে ৮৮ রান করা শন উইলিয়ামসনকে দিনের বড় প্রাপ্তিই বলতে পারে টাইগাররা। আজ দ্বিতীয় দিন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দলের একটাই লক্ষ্য যতদ্রুত সম্ভব বাকি পাঁচ উইকেট তুলে নেয়া। তবে শঙ্কাও আছে, ৩৭ করে পিটার মুর ও ২০ রানে অপরাজিত থাকা চাকাভা আছেন ক্রিজে। আজ টাইগার বোলারদের সামনে তারা প্রাচীর হয়ে উঠতে পারেন। বিশেষ করে ১৩৭ বল খেলা পিটার মুর দিচ্ছেন টেস্টে ধৈর্য্যের পরীক্ষা। তাই এই দু’জনকে ফেরানোর লড়াই দিয়েই দ্বিতীয় দিন শুরু করতে হবে বাংলাদেশকে।
সিলেটের টেস্ট যুগের সূচনাতে ঐতিহ্যের ঘণ্টায় ছিল বাংলাদেশের জয়ের প্রতিধ্বনি। ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ জয়ের হুংকার দিয়েছেন। দেশের ৮ম টেস্ট ভেন্যুকে তিনি স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছেন জয় দিয়ে। কারণ এর আগে দেশের প্রতিটি টেস্ট ভেন্যুর অভিষেকই হয়েছিল টাইগারদের হার দিয়ে। এদিনও শুরু হলো টসে হার দিয়ে। সিলেটের স্পোর্টিং উইকেটে আগে ব্যাটিং বেছে নিতে দ্বিধা করেননি অধিনায়ক মাসাকাদজা। এতে তার দু’টি কৌশল স্পষ্ট। একটি উইকেট ভালো থাকতে থাকতে ব্যাট করে যত বেশি সম্ভব রান তুলে নেয়া। সেইসঙ্গে টাইগার ফিল্ডারদের যতটা সম্ভব ক্লান্ত করা। যেন তারা ব্যাট করতে নামলে সেই ক্লান্তির সুবিধা নিতে পারে জিম্বাবুয়ের বোলাররা। প্রথমদিনে তারা সেই কৌশলে অনেকটাই সফল। সারাদিনই তারা ব্যাট করেছেন। কিন্তু দিনের শুরুতে বাংলাদেশের বোলাররা মাসাকাদজার পরিকল্পনাতে আঘাত হেনেছিলেন। সিলেট মাঠের অভিষেকে ওপেনিং জুটি থামিয়ে দেন ৩৫ রানেই। স্পিনার তাইজুল ইসলাম ১৩ রান করা ব্রায়ন চারিকে দেখান সাজঘরের পথ। সেই সঙ্গে সিলেটকে উপহার দেন প্রথম টেস্ট উইকেট। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে থেকে লড়াই চালিয়ে যান অভিজ্ঞ মাসাকাদজা।
কিন্তু প্রথম উইকেট পাওয়ার পর আক্রমণের তেজ বাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। পরের জুটিকে ১২ রানের বেশি টিকতে দেননি তাইজুল। তার দ্বিতীয় শিকার আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেইলর। মাত্র ৬ রানেই তাকে বিদায় করে দিনের শুরুতে দলকে স্বস্তি উপহার দেন এই স্পিনার। দিনের প্রথম পানি পানের বিরতিতে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান। আর মধ্যাহ্নবিরতিতে যাওয়ার আগে তাদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেট হারিয়ে ৮৫ রান। এই পর্যন্ত তাদের স্বস্তির নাম ছিল ৫২ রান করা অধিনায়ক মাসাকাদজা। কিন্তু মধ্যাহ্নবিরতির পর সিলেটের লোকাল বয় তাকে আউট করে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি বয়ে আনেন। ভেঙে যায় উইলিয়ামসনের সঙ্গে ৩৮ রানের প্রতিরোধ জুটি। এবার ভরসা হয়ে আসেন সিকান্দার রাজা। দেখে শুনে খেলতে থাকা উইলিয়ামসনের সঙ্গে হাল ধরেন। দু’জনের জুটিতে ম্যাচে ফেরার লড়াই হয় ৪৪ রানের জুটি। বাংলাদেশে নিজের অভিজ্ঞতার সবটুকু যখন রাজা কাজে লাগাচ্ছিলেন ঠিক তখনই অভিষিক্ত স্পিনার নাজমুল অপুর আঘাত। দারুণ এক বলে রাজার স্টাম্প ভেঙে দেন। ১৯ রানেই রাজাকে বিদায় করে দলের বিপদ কমিয়ে আনেন তিনি।
অন্যদিকে উইলিয়ামসনকে যেন থামানোই যাচ্ছিল না। তার সঙ্গে অসীম ধৈর্য্য নিয়ে টেস্ট টিকে থাকার পরীক্ষাই দিতে শুরু করেন পিটার মুর। দু’জন করেন ৭২ রান। শেষ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির পর এ দিনও তিন অঙ্কের হাতছানি দেখছিলেন উইলিয়ামস। ৮৮ রানে তাকে থামিয়েছে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। দিনে বাংলাদেশের শেষ সাফল্য সেটিই। মুর ও রেজিস চাকাভার ব্যাটিং দৃঢ়তায় শেষ ঘণ্টায় আর কোনো উইকেট হারায়নি জিম্বাবুয়ে।
উইকেট কেমন হয় তা নিয়ে ছিল নানা আলোচনা। একাদশও নির্ভর করছিল এই উইকেটের উপরই। শেষ পর্যন্ত টাইগাররা একাদশে বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়ে মাঠে নামলেই স্পষ্ট হয় এখানে রাজত্ব করবে স্পিনাররাই। অবশ্য আরিফুল হকের টেস্ট অভিষেক হওয়াতে দ্বিতীয় পেসারও যাচ্ছে দলে। ৯১ ওভারের দিন শেষে টাইগারদের প্রাপ্তির ৫ উইকেট নিয়েছেন ৪টিই নিয়েছেন তিন স্পিনার। এর মধ্যে তাইজুল ২টি, অভিজ্ঞ নাজমুল অপু ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ নিয়েছেন ১টি করে উইকেট। পেসারদের মধ্যে রাহীর শিকার একটি উইকেট।