শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা সম্প্রতি দেশের পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার বিষয়ে যে নির্দেশনা জারি করেছিলেন, তাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে সিরিসেনা যে আগাম নির্বাচনের ঘোষনা দিয়েছেন সেটিকেও অবৈধ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্টের ৭ সদস্য বিশিষ্ট বিচারিক বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট রুল জারি করে বলেছে, নির্বাচনের সাড়ে চার বছর পার হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারেন না। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রুল নিশ্চিতভাবেই সিরিসেনা ও রাজাপাকসে সরকারকে বেকায়দায় ফেলবে। আর বহিস্কৃত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার দাবিকে আরো জোরালো করবে। কেননা সুপ্রিমকোর্টের রায় না মানলে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাকে অভিশংসনের মুখেও পড়তে হতে পারে।
গত ২৬শে অক্টোবর শ্রীলঙ্কায় সংকট শুরু হওয়ার প্রায় সাত সপ্তাহ পরে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে এমন রুল জারি করা হলো। তখন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা তার একক ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বিক্রমসিংহকে অপসারণ করেন।সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। পরে ৯ই নভেম্বর পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে একটি ডিক্রি জারি করেন। কিন্তু এর পরপরই সুপ্রিম কোর্ট অন্তবর্তীকালীন রুল জারি করে প্রেসিডেন্টের ডিক্রি বাতিল ঘোষণা করে। কোর্ট আবারো পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকার নির্দেশ দেয়। পরে পার্লামেন্টে সিরিসেনা-রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে দু’দফা অনাস্থা প্রস্তাব পাস করা হয়। যদিও রাজাপাকসে সমর্থকরা স্পিকারের বিরুদ্দে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোট প্রত্যাখান করেছে।
গতকাল সুপ্রিম কোর্ট অন্তবর্তীকালীন রুলের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত দেয়। এতে পার্লামেন্টের মেয়াদ পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। অর্থাৎ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান পার্লামেন্টই বহাল রাখতে হবে। আর পার্লামেন্টে যেহেতু বিক্রমসিংহের দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই অপসারিত এই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পথ আরো সুগম হয়েছে।
রায়ের বিষয়ে এক টুইটার বার্তায় বিক্রমসিংহ বলেন, প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতি সম্মান দেখাবেন বলে প্রত্যাশা তার। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ গণতন্ত্রের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য এদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আতশবাজি ফুটিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছে বিক্রমসিংহর সমর্থকরা। তার দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিরিসেনার বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তারা রায়ের প্রতি সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখবেন। প্রেসিডেন্ট যদি সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তাহলে চুড়ান্তভাবে তাকে অভিশংসনের মুখে পড়তে হবে।