মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল পৌনে ৯টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে বের হয়ে আসার সময় এ ঘটনা ঘটে। ড. কামাল হোসেনের গাড়ি ছাড়াও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিকের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আ স ম আবদুর রবের গাড়ি চালককে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়।
বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জানান, সকাল থেকেই বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢল ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে আসেন এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যান।নেতাকর্মীরাও বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে আসেন এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যান।
ড. কামাল হোসেনসহ অন্যরা যখন বধ্যভূমিতে আসেন তখন লোকজনের উপস্থিতি কম ছিল। স্মৃতিসৌধ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় একদল যুবক কামাল হোসেন ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়।
এ বিষয়ে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, যারা স্বাধীনতার পক্ষের কথা বলে তারাই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে হামলা চালিয়ে প্রমাণ দিলো তারা আসলে কী? তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর পরই কামাল স্যার, রব, মান্না ও তার গাড়িতে হামলা চালানো হয়। ছাত্রলীগ-যুব লীগের একদল সন্ত্রাসী লাঠি-সোঁটা নিয়ে এই হামলা চালায়। তারা স্যারের গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেন, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনের রাস্তায় তাদের নেতাকর্মীদের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এ সময়ে নেতাকর্মীরা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে স্লোগান দেয়া শুরু করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এদিকে, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে ফেরার পথে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের গাড়িতে ওঠার পরই আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী আসলামুল হক আসলামের গুণ্ডা বাহিনী ছাত্রলীগের ইব্রাহীম, জাকির ও কমিশনার টিপুর নেতৃত্বে গাড়িবহরে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আমার, আ স ম আবদুর রব, জগলুল হায়দার আফ্রিকের গাড়িসহ ৭/৮টি গাড়ি ভাঙচুর হয়। হামলায় ঢাকা-১৪ আসনের ঐক্যফ্রন্টের এমপি প্রার্থী শাজাহান সাজু, আ স ম আবদুর রবের গাড়িচালকসহ ২৫/৩০ জন গুরুতর আহত হয়। হামলার সময় শত শত পুলিশকে নিরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
হামলার ঘটনায় নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে আহতদের কয়েকজনও উপস্থিত ছিলেন। তাদের কারও মাথায়, হাতে ব্যান্ডেজ দেখা যায়। হামলার বিষয়ে বিকালে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন বিষয়টি তাদের কেউ অবহিত করেনি।
এদিকে, স্মৃতিসৌধ থেকে রায়ের বাজার বধ্যভুমিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর ওই এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর কথা ছিল নেতাদের। তবে, হামলার পর এসব কর্মসূচি বাতিল করা হয়। এ ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের দিনের আরো কয়েকটি কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
‘চুপ করো, খামোশ’
এদিকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ড. কামাল। একপর্যায়ে জামায়াতের নির্বাচন করা নিয়ে ড. কামালকে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। প্রথম ড. কামাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের বিষয়টি উল্লেখ করে এ নিয়ে প্রশ্ন না করতে বলেন। পরে আবারো একই প্রশ্ন করা হলে অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে কামাল হোসেন বলেন, ‘কত টাকা পেয়েছ এই প্রশ্নগুলো করার জন্য? শহীদ মিনারে এসেছ, শহীদদের কথা চিন্তা করা উচিত। কোন চ্যানেল থেকে এসেছ? চিনে রাখব। চুপ করো, খামোশ!’
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছি। লাখো শহীদ জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, সেই স্বাধীনতাকে আমরা ধরে রাখি। অর্থপূর্ণ করি সবার জন্য। এই স্বাধীনতা ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে যারা আখের গোছাতে চাচ্ছে, তাদের জন্য নয়, সব মানুষের প্রাপ্য।’ তিনি বলেন, ‘শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, লোভলালসা নিয়ে লুটপাট করছে, তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করবই।