৯ই জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। বিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে, জোরেশোরে চলছে সাজসজ্জার কাজ। নির্মাণযজ্ঞ দ্রুত শেষ করতে কয়েক দিন ধরে দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকরা। আগেভাগে বরাদ্দ পাওয়া বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্যাভিলিয়ন নানা কারুকাজে সাজিয়ে তুলতে ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পার করছেন ব্যস্ত সময়। প্যাভিলিয়ন নির্মাণে অনুসরণ করা হয়েছে গ্রিন টেকনোলজি মেথড। যথারীতি মেলার আয়োজন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
মেলাকে সফল ও সুন্দর করতে ইপিবি সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো ১লা জানুয়ারি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে পিছিয়ে ৯ই জানুয়ারি ঠিক করা হয় মেলার উদ্বোধনের দিন। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মেলা চলবে ৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গত বছর মূল ফটকটি পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি হলেও এবার তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেলের আদলে। এবারের মেলায় বাড়তি চমক হিসেবে থাকছে অনলাইন টিকিটের ব্যবস্থা। ফলে ঘরে বসেই কাটা যাবে বাণিজ্যমেলার টিকিট। পাশাপাশি থাকবে ম্যানুয়াল পদ্ধতির টিকিট ব্যবস্থাও।
সরজমিন দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে ৩১.৫৩ একর জমি জুড়ে চলছে বাণিজ্যমেলার প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞ। মেলা প্রাঙ্গণে মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন বেশির ভাগ স্টলে চলছে রঙ-তুলির কাজ। স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন নির্মাণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শত শত শ্রমিক। তবে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন নির্মাণে অনুসরণ করা হয়েছে গ্রিন টেকনোলজি মেথড।
বাণিজ্যমেলার সদস্য সচিব ইপিবির উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, মেলা প্রাঙ্গণ লাল-সবুজের আদলে সাজবে। কেনাবেচার পাশাপাশি বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকবে। বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা হবে। এবার ৭ই মার্চের গুরুত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন আরো তথ্যবহুল ও সমৃদ্ধ করা হবে। বেশ কয়েকটি শিশু পার্ক তৈরি করা হবে। গতবারের মতো ডিজিটাল টাচস্টিক্রনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্টল ও প্যাভিলিয়ন খুঁজে পাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও স্টল খুঁজে নিতে পারবেন দর্শনার্থীরা। টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ এবং শিশুদের জন্য ২০ টাকা। অনলাইন টিকিটিংয়ের দায়িত্বে থাকবে ভ্যালিকন ডিজিটাল। বিকাশসহ বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে টিকিট কাটা যাবে।
এবার প্রস্তুতিতে ৯ দিন বাড়তি সময় পেলেও পুরো কাজ শেষ হতে আরো কয়েক দিন লাগতে পারে বলে জানান স্টল/প্যাভিলিয়ন নির্মাণে দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা। আকিজ, ওয়ালটন, মাইওয়ান, মার্সেল, হাতিল ও আকতার ফার্নিচার, প্রাণ, কারুপণ্যসহ বেশিরভাগ কোম্পানির প্যাভিলিয়নের মূল অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। স্টলগুলোর কাজও অনেক এগিয়েছে। বেশির ভাগ প্যাভিলিয়নের নির্মাণ কাজে অনুসরণ করা হয়েছে গ্রিন টেকনোলজি মেথড। যা ৯০ শতাংশই পরবর্তীতে ব্যবহারযোগ্য।
মেলা প্রাঙ্গণে ওয়ালটন প্যাভিলিয়ন (নম্বর-২৩) ঘুরে দেখা গেছে, ইতিমধ্যেই প্যাভিলিয়নের বাহ্যিক কাঠামো, সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে প্যাভিলিয়নের ভিতরের ডেকোরেশনের কাজ। তিনতলা বিশিষ্ট সুদৃশ্য প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন নির্মাণে অনুসরণ করা হয়েছে গ্রিন টেকনোলজি মেথড। প্রবেশদ্বারের ডিজাইনে থাকছে নান্দনিক টেরা-কোটা। প্রথম তলায় প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য থাকছে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক ও মাইক্রোওয়েব ওভেন, ইন্ডাকশন কুকার, ব্লেন্ডার, গ্যাসস্টোভ, বৈদ্যুতিক পাখা, ইলেকট্রিক সুইস-সকেট, এসিড লেড রিচার্জেবল ব্যাটারিসহ কয়েক শতাধিক মডেলের বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস। দ্বিতীয় তলায় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড এক্সেসরিজ, লিফট, কম্প্রেসার, জেনারেটরসহ বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস।
প্যাভিলিয়ন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, এবার কিছু চমক থাকছে। থাকছে ৯৮ ইঞ্চির বড় পর্দার এলইডি টিভি। যেখানে ওয়ালটন পণ্যের অত্যাধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং করপোরেট ডক্যুমেন্টারি প্রদর্শিত হবে। এতে করে মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা ওয়ালটন পণ্যের উৎপাদন সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান পাবেন।
ইপিবি’র তথ্যমতে, মেলায় থাকছে দেশি-বিদেশি ৫৬০টি স্টল। মেলায় স্থান পাবে সংরক্ষিত নারী স্টল ২০টি, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ৬০টি, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ৩৮টি, সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৮টি, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়িন ২৯টি, প্রিমিয়ার স্টল ৬৭টি, রেস্টুরেন্ট ৩টি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ৯টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৬টি ও বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৬টি। এছাড়া দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়ন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫০০ প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে বাণিজ্য মেলায়।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, মেলায় এ পর্যন্ত ৪৩টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এবছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাস্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ভুটান, নেপাল, মরিশাস, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, রাশিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, সোয়াজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও হংকং।