প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর জাতীয় মহাসড়কগুলোকে টোলের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ৩রা সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর পাশাপাশি জাতীয় মহাসড়কগুলোকে টোলের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। গতকাল সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রশ্ন ছিল সরকার কী সেই সিদ্ধান্তে অনড়। জবাবে তিনি বলেন, অনড়, প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর তো … কোনো বিষয় নেই। এটার প্রক্রিয়া চলছে। পৃথিবীর সব দেশেই সড়কে টোল আছে। চার লেন, ছয় লেন, আট লেনের সড়ক হবে, সড়ক যারা ব্যবহার করবে, সব দেশেই তাদের সড়কে টোল দিতে হয়। বাংলাদেশ কেন ব্যতিক্রম থাকবে? তিনি বলেন, সড়কতো মেরামত করতে হয়, সংস্কার করতে হয়। বিভিন্নভাবে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ওভারলোডের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়ক দেবে যায়, গর্ত সৃষ্টি হয়। এগুলো তো মেরামত করার প্রয়োজন হয়। এতে অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, আগে যে রাস্তায় আট ঘণ্টায় যেতেন, এখন সেই রাস্তায় সাড়ে তিন ঘণ্টায় যাচ্ছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কত সময় আপনি সাশ্রয় করতে পারছেন? কাজেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এই রকম আশঙ্কা নেই। মহাসড়কে টোলের হার নির্ধারণের প্রক্রিয়াও চলছে জানিয়ে তিনি, বলেন, বিষয়টিকে রিজনেবল রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিয়ম-কানুন, কোন গাড়ির কত টাকা টোল হবে, কোন রাস্তায় কত হবে- এই বিষয়গুলো একটা নিয়মের মধ্যে আনা হচ্ছে। এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সবকিছু চূড়ান্ত করার আগে অংশীজনদের সঙ্গেও সরকার বসবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, মেইনলি জাতীয় মহাসড়কের যেগুলো চার লেন, ছয় লেন, আট লেন- এইসব সড়ক ও হাইওয়েগুলো টোলের আওতায় পড়ে। আমরা এখন জেলা সড়ক যদি টোলের আওতায় নিয়ে আসি সেটা সঠিক হবে না। আমরা সেভাবে চিন্তা-ভাবনা করছি না। আমাদের চার লেনের মহাসড়কগুলোতে টোল আরোপের চিন্তা-ভাবনা করছি। আপাতত ৪ থেকে ৫টা আছে। নতুন ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে, সেটাও কিছু দিনের মধ্যে উদ্বোধন হবে। ঢাকা-এলেঙ্গা, জয়দেবপুর-এলেঙ্গা সেটার কাজও প্রায় শেষ, সেখানেও টোল আরোপ হবে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত টেন্ডার হয়ে গেছে, সেটাও চারলেন হচ্ছে। মহাসড়কে টোল আদায়ের সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী বলে বিএনপির বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, তারা কোনো ফোর লেন করেনি, কাজেই তাদের এসব বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। পদ্মা সেতুর টোল নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
এদিকে মহাসড়কে টোল বসানোর ঘোষণার পর চলছে এনিয়ে আলোচনা সমালোচনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রথমবারের মতো এ উদ্যোগ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি ও পন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যাবে। এটি সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে। এতে অল্প হলেও দ্রব্যমূল্যে প্রভাব পড়বে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।