দেশে অধিকহারে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ফলে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে সতর্ক করেছে পাঁচটি সংগঠন। গতকাল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, দেশে নতুন করে চালু হচ্ছে ২৯টি কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এরমধ্যে ৪টি হবে রাজধানী ঢাকার পাশে। কয়লাচালিত এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকার পাশে ৪ টি ছাড়াও বরিশালে ৮টি, চট্টগ্রাম, রংপুর এবং দিনাজপুরে ২ টি করে, আর কক্সবাজারে রয়েছে এমন আরো ১০টি প্রকল্প। এই ২৯ টির মধ্যে একটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে, বাকিগুলো ২০৩২ সালের আগেই চালু হবে।
প্রকল্পগুলো থেকে প্রতিদিন উৎপাদন করা হবে ৩২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে টিআইব্থির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ একটি ক্রম অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ। আমাদের বিদ্যুৎ চাহিদা অনস্বীকার্য। কিন্তু তাই বলে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার পাশাপাশি প্রকৃতি এবং পরিবেশের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত পদ্ধতি অবলম্বন করে তৈরিকৃত প্রকল্প আমরা দেখতে চাইনা।
বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল মতিন বলেন, ইউনিসেফ ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনকে ধ্বংসাত্মক বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য পরিবেশ বিপর্যয়ের সাথে বাংলাদেশের ১ কোটি ১৯ লাখের বেশি শিশুদের জীবন এবং ভবিষ্যত হুমকির সাথে সংযুক্ত করেছে।
ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, আমাদের দেশটি অন্যান্য দেশের মত নয়। এটি পলিমাটি দিয়ে গঠিত একটি দেশ এবং যথেষ্ট সক্রিয়। তাই কী পরিমাণ শিল্প কারখানা এই দেশ ধারণ করতে পারবে তা যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করা হয় তাহলে দেশ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হবে। আর মূল্যায়ন করার পর আমাদের নির্ধারণ করা লাগবে যে আমাদের কতটুকু শক্তি দরকার। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা সম্ভব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বড় আকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা মূলত বৈদেশিক ঋণ সহায়তায় নির্ভর, যেটি সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণভার বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্যকে আরও প্রকট করে তুলবে। প্রস্তবিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশকে বার্ষিক ২ শত কোটি ডলার মুল্যের ৬ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করতে হবে। যা বাংলাদেশকে কয়েক দশকের জন্য উচ্চমূল্যের কয়লা আমদানির ফাঁদে ফেলে দেবে, যেটি কিনা নতুন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শঙ্কাও তৈরি করবে।
এতে বলা হয়, বিশ্বে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ সবচেয়ে ক্ষতিকর এবং নোংরা জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত। যা বিষাক্ত নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার অক্সাইড, পিএম ২.৫, কয়লার ছাই ও এসিড নির্গমনের মাধ্যমে বায়ু ও পানি দূষণে বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পারদ, শিসা ও ক্রোমিয়ামের মত ভারি ধাতু নির্গমন করে, যা দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে শুরু করে অকাল মৃত্যুরও কারণ।