সম্প্রতি ভারতে উপস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের কর্মকর্তারা তহবিল তৈরি করে এক দরিদ্র বাংলাদেশী নারীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। অথচ, মাত্র একদিন বেশি থেকেছিলেন তিনি। এক বছর আগে চালু করা ভারতের ভিসা জরিমানার নিয়ম বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ, ওই নিয়ম চালুর পর থেকে, ভিসার মেয়াদের চেয়ে বেশি দিন ভারতে থাকলে বাংলাদেশের মুসলিমদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে হিন্দু বা অন্য সংখ্যালঘু নাগরিকদের চেয়ে ২০০ গুণ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই জরিমানার নিয়মকে ধর্মীয় বৈষম্যের সামিল বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, আসন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই ইস্যু তারা উত্থাপন করবেন। এ খবর দিয়েছে দ্য হিন্দু।
খবরে বলা হয়, দুই সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই ইস্যু সামনে চলে আসে। তখন বাংলাদেশী ক্রিকেটার সাইফ হাসান বুঝতে পারেন তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
তিনি বিষয়টি কলকাতায় অবস্থিত ডেপুটি হাই কমিশন অফিসে জানালে, সেখান থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করা হয়। ভারতের বৈদেশিক আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিসের ওয়েবসাইটে এ ব্যাপারে যে নিয়ম আছে, সেখানে উল্লেখ আছে যে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ভিসার মেয়াদ অতিক্রম হয়ে গেলে, ২ বছরের বেশি সময়ের জন্য গুনতে হবে ৫০০ রুপি, ৯১ দিন থেকে ২ বছরের জন্য ২০০ রুপি, ১ থেকে ৯০ দিনের জন্য ১০০ রুপি। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্থাৎ মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে ডলারে জরিমানা গুনতে হবে। সেক্ষেত্রে ২ বছরের বেশি সময়ের জন্য ৫০০ ডলার বা ৩৫ হাজার রুপি, ৯১ দিন থেকে ২ বছরের জন্য ৪০০ ডলার বা ২৮ হাজার রুপি, ১ থেকে ৯০ দিনের ক্ষেত্রে ৩০০ ডলার বা ২১ হাজার রুপি।
কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাই কমিশনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘এর অর্থ হলো বাংলাদেশী ক্রিকেটার লিটন দাস (হিন্দু) যদি ভিসার মেয়াদের অতিরিক্ত একদিন থেকে যান, তিনি পরিশোধ করবেন ১০০ রুপি। কিন্তু সেই ব্যক্তির নাম যদি হয় সাইফ হাসান, তাহলে তাকে দিতে হবে ২১ হাজার রুপি। আর সেটাই সাইফকে পরিশোধ করতে হয়েছে।’
সম্প্রতি, এক দরিদ্র বাংলাদেশী নারী ভিসার অতিরিক্ত রয়ে যান ভুলক্রমে। তার কাছে কোনো টাকা ছিল না। ওই কর্মকর্তা বলেন, ওই মহিলাকে ২১ হাজার রুপি পরিশোধ করতে হয় এক দিনের জন্য। তার কাছে টাকা ছিল না। অগত্যা, আমরা হাই কমিশনের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে ওই জরিমানা পরিশোধ করি। ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য কেন থাকবে?
এছাড়া পাকিস্তানি ও বাংলাদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে একই জরিমানা থাকার বিধান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ওই কূটনৈতিক। তার প্রশ্ন, ভারত কি ঐতিহাসিকভাবে বা নৈতিকভাবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে একই বন্ধনীতে ফেলতে পারে?