দক্ষিণ দিল্লির গার্গী কলেজের উৎসবে অভূতপূর্ব তাণ্ডব চালালো বহিরাগতরা। ছাত্রীদের দাবি, সন্ধ্যার প্রচুর বহিরাগত জোর করে কলেজে ঢুকে পড়ে। কলেজের বাইরে মোতায়েন ছিল পুলিশ ও দাঙ্গা-বিরোধী বিশেষ বাহিনী। কিন্তু তারা ছিল নীরব দর্শক। বহিরাগতরা ভেতরে ছাত্রীদের তাড়া করে। তাদের যৌন হেনস্থা করে। খবর ডয়চে ভেলের।
ছাত্রীদের দাবি, অন্তত ৪০ জন ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। তাদের মধ্যে অর্ধেক মদ্যপ ছিল। যেসব ছাত্রী তাদের হাতের সামনে চলে আসেন, তারাই যৌন হেনস্থার মুখে পড়েন। দেশের রাজধানী শহরে একটি নামকরা মহিলা কলেজে পুলিশ থাকাকালীন এই ধরনের ঘটনা অভাবনীয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর অভিজ্ঞতা হলো বহিরাগতদের তাণ্ডব শুরু হওয়ার পরে তিনি খেয়াল করেন কলেজের প্রধান গেট খালি। প্রধান গেট খালি দেখে তিনি বের হতে যাচ্ছিলেন। তাকে বের হতে দেখেই এক মদ্যপ বহিরাগত তেড়ে আসে। তার সামনে দাঁড়িয়েই হস্তমৈথুন করতে থাকে।
ওই ছাত্রী জানান, কোনও মতে সেখান থেকে তিনি পালান। তখনই তার দেখা হয় এক প্রথমবর্ষের এক ছাত্রীর সঙ্গে। সেই ছাত্রী জানান, চার-পাঁচজন লোক তাকে তাড়া করেছে। দুইজনে লুকিয়ে বাঁচেন।
কিন্তু সবাই লুকিয়ে বাঁচতে পারেননি। আর এক ছাত্রীর অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে আরও ভয়াবহ সব কাহিনি। তিনি জানিয়েছেন, বহু ছাত্রীকে তাড়া করে কলেজের শৌচাগারে ঢুকিয়ে আটকে দেয় বহিরাগতরা। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে বলা হলে তারা জানিয়ে দেন, কিছু করা সম্ভব নয়।
পুলিশের সামনেই পুরো ঘটনাটি ঘটলেও তারাও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। ছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে কলেজের গেটের বাইরে সিএএ’র সমর্থনে সভা করছিল বিজেপি। ট্রাকে করে যে বহিরাগতরা সে দিন ঢুকে ছিল, তারা ওই সভা থেকেই এসেছিল।
সম্প্রতি দিল্লির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশের ব্যবহার প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। জেএনইউতে পুলিশের সামনে বহিরাগতরা ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক মেরেছে। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ আক্রান্তদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে যে দাবি করেছে, পরে তথ্য জানার অধিকার আইনে সে বিষয়ে জানতে চেয়ে দেখা গেছে, পুলিশের বয়ান সত্য নয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রবীণ সাংবাদিক অবন্তিকা ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, দিল্লির রাজনীতিতে এখন যে ধরনের কথা বলা হচ্ছে, যে ধরনের উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে, তার একটা প্রভাব অন্যত্র পড়াটা স্বাভাবিক। গত কয়েক মাস ধরে এমন একটা ধারণা তৈরি করে দেয়া হচ্ছে, শিক্ষিত ও নিজেদের মতামত থাকলেই সে মোটামুটি জাতীয়তাবিরোধী। জেএনইউ, জামিয়ায় জাতীয়তা বিরোধীদের চাষ হয়। এভাবেই একটা অদ্ভুত ন্যারেটিভ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।’
দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন গুলশন। বহুদিন পুলিশের খবর করেছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশকে আগে কখনও এ রকম নিষ্ক্রিয় দেখা যায়নি। যখন গণমাধ্যমে প্রবল হইচই শুরু হয়েছে, তারপর পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে।
বস্তুত শুধু পুলিশ নয়, গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পরে ঘটনার প্রায় চার দিন পর কলেজ প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। সোমবার গার্গী কলেজের ঘটনা লোকসভায় তোলেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ।
তারপর মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল জানান, তদন্ত চলছে। কলেজ প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও বলেছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল এদিন কলেজে গিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, ছাত্রীদের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে আছে। সিসিটিভি ফুটেজও থাকার কথা। তারপরও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি হবে কেন? এর দায় পুলিশ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে দাবি তুলেছে নাগরিক সমাজের একাংশ।