করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বের ১৩টি দেশ স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ২৯ কোটি ৫ লাখ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ৯টি দেশ স্থানীয়ভাবে বন্ধ রেখেছে শিক্ষা কার্যক্রম। সর্বশেষ ইতালিতে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার এসব তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো। রোম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইতালি সহ বিশ্বজুড়ে আজ বৃহস্পতিবার প্রায় ৩০ কোটি ছেলেমেয়েকে স্কুল বাদ দিয়ে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্বজুড়ে এই মহামারির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক এবং সর্বোত্তম প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ।
নতুন করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কমপক্ষে ৯৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন কমপক্ষে ৩২০০ মানুষ। আর এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে ৮০টি দেশ ও ভূখণ্ডে। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন চীনে। প্রথমে সেখানকার উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। তারপর থেকে একের পর এক শহর, কলকারখানা ও স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়ে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ফলে অন্য দেশগুলোও নিতে থাকে ব্যতিক্রমী সব পদক্ষেপ।
ইউনিসেফের প্রধান অড্রে অ্যাজুলে বলেছেন, বিশ্বজুড়ে যে মাত্রায় এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে এবং তাতে শিক্ষা ব্যবস্থা যেভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে তা অসম। যদি এটা দীর্ঘায়িত হয় তাহলে শিক্ষার অধিকার হুমকিতে পড়তে পারে। ওদিকে বুধবার সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ১৫ই মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইতালি। সেখানে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১০৭-এ পৌঁছার ফলে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। চীনের পরে সবচেয়ে ভয়াবহতার দিক দিয়ে এখন এই ইতালির অবস্থান।
দক্ষিণ কোরিয়া আগামী ২৩ শে মার্চ পর্যন্ত তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৬০০০ মানুষ। আক্রান্তের দিক দিয়ে চীনের পরেই দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান। অন্যদিকে মার্চ মাসের ক্লাস বাতিল করে প্রায় সব স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। বর্ধিত করা হয়েছে বসন্তকালীন ছুটি। মার্চের শেষ দিক থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত এই বসন্তকালীন ছুটি থাকার কথা ছিল। এ সপ্তাহে ফ্রান্সে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ১২০টি স্কুল।
করোনা ভাইরাসের কারণে যে শুধু শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে এমন নয়। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক মহামারি লাগবে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই অবস্থাকে ‘গ্লোবাল প্যান্ডেমিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। চীনের বাইরে বর্তমানে এই সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে বৃহস্পতিবার চীনে মারা গেছেন ৩১ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন। বর্তমানে চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০১২ জন। আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৮০ হাজার। পশ্চিম ইউরোপ থেকে পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত সুপারমার্কেটগুলোর সেলফ ফাঁকা হতে শুরু করেছে। টয়লেট পেপার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় তাই এই পণ্যগুলো রেশনিং করে দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রেও অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।