অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ হতে চলেছে। ৩০ লাভ শহিদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারও প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যোজাত জাতির ৫০ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। জাতির সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে আনা সম্ভব হয়েছে।
পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে জাতি নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল।
কৃষি খাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশে বাংলাদেশের এক কোটির অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ পর্যন্ত বিশ্বের বহু দেশের শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে। বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে। এছাড়াও অনেক কিছুতেই দেশ সামনের দিকে চলমান।
এতসব সাফল্যের পিছে শুধু শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার না করে বরং বলুন সবার সক্রিয় উদ্যোগের কারণে সব কিছু সম্ভব হয়েছে। কারণ যদি সারাক্ষণ সবাই বলি দেশের সব সাফল্যের পেছনে শেখ হাছিনার অবদান তাহলে আমার প্রশ্ন বাকি সব অসাফল্যের পেছনেও তাহলে তার অবদান? আমাদের একটু ভেবে কথা বলা শিখতে হবে।
স্বাধীনতার মাস সত্যকে তুলে ধরা এবং সেটাকে স্বীকার করার নাম সাফল্য, যদিও সরাসরি সাফল্যের কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে সফলতা একটি উপলব্ধির ব্যাপার এবং এই উপলব্ধির কিছু নমুনা বা উদাহরণ আছে । সফল সন্তান হিসাবে আমাদের অ্যাচিভমেন্ট বা কৃতিত্ব হোক জাতির জন্য গর্ব। স্বাধীনতার মাসে এটা হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
অ্যাচিভমেন্ট বা কৃতিত্ব কী এবং কীভাবে তার প্রতিফলন হতে পারে? কোন ধরণের কৃতিত্ব সেরা প্রশংসার যোগ্য এবং কেন? সংগ্রামী জীবনে ত্যাগ এবং ভোগের সমন্বয় এক সঙ্গে ঘটে না। দেওয়া নেওয়াটা জীবনের প্রথম চ্যালেঞ্জ যা শিখতে কিছু মানুষের সারা জীবন কেটে যায়। তবুও তারা শুধু নিতে শিখে, দিতে নয়। আবার কারো জন্মই হয়েছে শুধু দেবার জন্য, আছে কি তেমন উদাহরণ? দেওয়া-নেওয়ার সমন্বয়ে মনুষ্যত্বের বেস্ট প্র্যাকটিস অব্যাহত রাখা মানব জাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে গিয়ে হাজারো বাঁধা-বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হয়, আর তার প্রতিফলনকেই বলতে পারি অ্যাচিভমেন্ট।
মাছ স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটে, একটি ডিমের ভিতরে নতুন জীবনের সূচনা ঘটে, পরে বাইরের জটিলতা ভেঙে বের হয় ছোট প্রাণী। ছোট্ট একটি বীজ মাটি ভেদ করে হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে বেড়ে ওঠে। মানব জাতির ক্ষেত্রে সাধারণত একই ঘটনা ঘটে। কৃতিত্ব পেতে হলে হয় কঠিন পরিশ্রম বা সাধনা করতে হবে অথবা জন্মগতভাবে সুযোগ-সুবিধার সমন্বয় ঘটাতে হবে।
খেলাধুলোর ক্ষেত্রে কৃতিত্বটা বেশ সহজে যেমন দেখা যায়- তেমনটি জানা যায় না কী পরিমাণ শ্রম জড়িত রয়েছে এই কৃতিত্বের পেছনে। সবাই আশা করে সাফল্য কিন্তু অনেকেই জানে না এই সাফল্যের পিছনে কী পরিমাণ ত্যাগ, কর্ম, ডেডিকেশন এবং মোটিভেশন জড়িত রয়েছে।
অ্যাচিভমেন্ট হতে পারে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বা সর্বজনীন। যদি কেউ তার মৌলিক কাজকর্মের প্রতিফলনকে ভৌগোলিক পর্যায়ে উপনীত করতে সক্ষম হয় এবং তা যদি নতুনত্বের সমন্বয় ঘটাতে পারে তখন তার অ্যাচিভমেন্ট রেওয়ার্ড হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেতে পারে, যা বাংলাদেশের সন্তান ড. মুহম্মদ ইউনুস প্রমাণ করেছেন। এই নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পুনরাবৃত্তি আবারও হতে পারে আমাদের বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে দিয়ে। কারণ তাঁর শাসন আমলে রোহিঙ্গা ইস্যুর ক্রিটিক্যাল সময় বাংলাদেশ এতবড় একটি দায়িত্ব নিয়েছে যা নিঃসন্দেহে হতে পারে শেখ হাসিনার প্রশাসন জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাচিভমেন্ট, যার ফলে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
এতসব ভালোর মধ্যেও অনেক সমস্যা রয়েছে দেশে যার সমাধান করতে হবে। গণতন্ত্রের বেস্ট প্র্যাকটিস চালু করতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে হবে ইত্যাদি। কিছু কিছু সমস্যা হয়ত বড় সমস্যা নয় কিন্তু কথায় বলে কান টানলে মাথা আসে। উদাহরণস্বরূপ ছোট্ট একটি ঘটনা তুলে ধরি সেটা হলো “অন ডিউটি আর অফ ডিউটি”। পুলিশ যখন তার পোশাক পরে কর্মরত তখন পুলিশ “অন ডিউটিতে”, যখন সিভিল পোশাকে শহরে ঘোরাঘুরি করে তখন “অফ ডিউটিতে”।
এখন দেশের জঘন্য ট্রাফিকের দুর্যোগ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে পুলিশ “অফ ডিউটিতে” দিব্বি গাড়িতে ছোট্ট করে লিখে দিয়েছে “পুলিশ” তাতে করে ট্রাফিক পুলিশ তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ট্রাফিকের ঝামেলা থেকে রক্ষা করছে। এটা নিশ্চয়ই পুলিশের সাফল্য, কৃতিত্ব বা কোন ভালো অর্জন নয়। এটা অন্যায় এবং এটাকে বলা হয় ক্ষমতার অপব্যবহার। স্বাধীনতার মাসে সবার গোলস এন্ড অবজেকটিভস হোক সোনার বাংলা গড়ার মন মানসিকতা। সাফল্য, সুশিক্ষা এবং সৃজনশীল সমাজ পেতে দরকার গণতন্ত্রের সমন্বয় ঘটানো, এটা হলে জাতি হিসেবে আমরা হব গর্বিত।