দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। মূলত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মাঠ ও নেতাকর্মীদের ‘চাঙা’ রাখতেই বিএনপির এই গণসমাবেশ। কিন্তু সমাবেশকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের কৌশলে গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে আশানুরূপ লোকসমাগম করতে পারছে না বলে অভিযোগ দলটির। তাই, সামনের সমাবেশগুলোতে আরও লোকসমাগম ঘটাতে ‘গোপন’ কৌশল নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল, প্রশাসন ও গণপরিবহনের বাধা মোকাবিলায় রাজপথে নিজেদের শক্তি জানান দিতে দলটি ‘গোপন’ কৌশল নিচ্ছে। তবে গোপনীয়তার স্বার্থে এই কৌশল বিষয়ে দলটির কেউ কথা বলতে রাজি নয়। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সামনে আরও বেশ কয়েকটি গণসমাবেশ রয়েছে। বিভাগীয় এসব সমাবেশে দূরের জেলাগুলো থেকে বেশি নেতাকর্মী আনার চেয়ে সংশ্নিষ্ট বিভাগীয় মহানগরের ও আশপাশের জেলার তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে উপস্থিতির ওপর জোর দিচ্ছে দলটি।
এ ছাড়া গণপরিবহন ধর্মঘটের আগেই সমাবেশে উপস্থিত হতে বেশির ভাগ নেতাকর্মীদের কয়েক দিন আগেই আত্মীয়, বন্ধুদের বাসা এবং মেসে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, সরকারের বাধার পরেও ইতোমধ্যে চারটি বিভাগীয় সমাবেশ সফল হয়েছে। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃঢ়তা ও সাহসিকতায় উজ্জীবিত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতাকর্মীদের এমন মনোবল নিয়ে আগামী দিনে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার কৌশলে হাঁটছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপির গণসমাবেশগুলোতে বাধা দিয়ে সরকারের লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হচ্ছে। দেশের মানুষ ও গণমাধ্যমের দৃষ্টিও সমাবেশগুলোর প্রতি বেড়ে গেছে। তাই সামনের সমাবেশগুলোতে আরও বেশি লোকসমাগম ঘটাতে নানা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের কোনো বাধাই কাজে আসবে না। এই সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।
সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলছেন, বিএনপির গণসমাবেশ ব্যর্থ করতে সরকার নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মানুষ একসময় হেঁটে মক্কায় গিয়ে হজ করত। আমাদের নেতাকর্মীরা দরকার হলে পায়ে হেঁটে এসে সমাবেশে যোগ দেবেন।
এদিকে ৫ নভেম্বর পরবর্তী বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জানান, কোনো বাধাই সমাবেশ আটকাতে পারবে না। জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে। তাদের প্রস্তুতিও তেমন।
তিনি বলেন, সমাবেশ সফল করতে দিনরাত একাকার করে পথসভা, লিফলেট বিতরণ, কর্মিসভা, প্রস্তুতি সভা চলছে।
বিএনপির অভিযোগ, বরিশাল গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা যাতে কোনো আবাসিক হোটেলে উঠতে না পারেন, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যত বাধাই দেওয়া হোক না কেন, কিছুতেই জনস্রোত আটকানো যাবে না।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদকে বিলুপ্ত, সরকারকে পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর বিভাগে গণসমাবেশ করা হয়েছে।
সামনে আরও পাঁচটি গণসমাবেশ ও ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে দলটির। এর মধ্যে আগামী ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় এ কর্মসূচি রয়েছে।