অনির্বাচিত সরকারের অভিযোগ ও জিএসপি সুবিধা নাকচে বিদেশী বিনিয়োগ তলানিতে ঠেকেছে। আগে যেখানে বিদেশী কর্মসংস্থান, শিল্প নিবন্ধন ও বিনিয়োগ ছিল হাজার কোটি টাকা। এখন তা শত কোটিতে নেমে এসেছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানেও। বিনিয়োগ বোর্ডের এক তথ্যে দেখা যায়, গত ৩ মাসের ব্যবধানে বিদেশী কর্মসংস্থান কমেছে ১৫৩৯ জনের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিনিয়োগ বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএসপি সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। তাতে বিনিয়োগ কিছুটা ইতিবাচকও হয়েছিল। কিন্তু অতিসমপ্রতি জিএসপি দাতাগোষ্ঠী যখন সে সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়, ঠিক তখনই বিদেশী বিনিয়োগ তলানিতে নামতে শুরু করে। এ ছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কোন কিনারা হয়নি বলেও তিনি মনে করেন। বিনিয়োগ বোর্ডের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে মাত্র ১২৩ কোটি টাকার বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে। যা এপ্রিলে ছিল ২৩৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ১১৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ কমেছে। এ সময় ৭ প্রকল্পের মাধ্যমে মাত্র ৮১৩ জনের কর্মসংস্থান হয়। যা এপ্রিল ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ২১৪৭ ও ২৩৫২ জন। সে হিসেবে ৩ মাসের ব্যবধানে বিদেশী কর্মসংস্থান কমেছে ১৫৩৯ জনের। বিনিয়োগ বোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৩৫৩৭ কোটি টাকা। যা এপ্রিলে ছিল ৬৪৪৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক মাসে বিনিয়োগ কমেছে ২৯১২ কোটি টাকা। এ সময় ১৫৪টি শিল্প নিবন্ধনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে ২৫৫০৬ জনের। যা আগের মাসে ছিল ১৭০টি শিল্প নিবন্ধনের মাধ্যমে ২৩৪১০ জন। বিওআই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে দেশী শিল্পের নিবন্ধন হয়েছে ১৪৭টি। যা এপ্রিলে ছিল ১৬০টি। কমেছে ১৩টি। এ সময় বিনিয়োগ হয়েছে ৩৪১৪ কোটি টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৬২১৩ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় ২৪৬৯৩ জনের। যা আগে ছিল ২১২৬৩ জন। এ প্রসঙ্গে রপ্তানি বিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম মুর্শেদী মানবজমিনকে জানান, আমরা নানা দিক থেকে বেকায়দায় আছি। একদিকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও উচ্চ সুদের কারণে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশী পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর কড়া পর্যবেক্ষণ ও নানা শর্তাবলি। এসব বহুমুখী সমস্যা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী ৬ মাসেও বিনিয়োগ পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী হতে পারবে না। পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা তো আছেই। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।