বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের স্মারক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এমএজি ওসমানী উদ্যান। কিন্তু সচিবালায় ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার সংলগ্ন উদ্যানটি এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্য। অযত্ন আর অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পড়েছে উদ্যানটি। নগর ভবনের সামনে হওয়া সত্ত্বেও এ দুরবস্থার জন্য দায়ী অথর্ব সিটি করপোরেশন, একই সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অসৎ সদস্যরা। এখানে দিনে মাদকসেবী, গাঁজাখোরদেরদ আড্ডা আর অন্ধকার নামলেই চলে যৌন ব্যবসা।
এছাড়া এক সময়ের মনোমুগ্ধকর ওসমানী উদ্যান এখন যেন ময়লা আবর্জনার স্থায়ী ডাস্টবিন ও ভাসমান মানুষের উন্মুক্ত টয়লেট। অবহেলা আর নজরদারির অভাবেই এ মনোরম পার্কটি দিন দিন অপরাধীদের অড্ডাখানায় পরিণত হচ্ছে। জুয়া, চুরি, ছিনতাই, পকেটমার, ভাসমান যৌনকর্মীদের অবাধ বিচরণ এখানে। এদের দৌরাত্ম্যে পার্কটিতে সাধারণের চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ শান্ত ও শীতল। বেড়ে ওঠা গাছগুলোর পাতায় পাতায় বর্ষার নতুন পানির ছোঁয়ায় গজিয়েছে নতুন পাতা। গাছে গাছে হরেক প্রজাতির পাখ-পাখালির কিচিরমিচির। উদ্যানের বিভিন্ন গাছের মগডালে নাম না জানা পাখির বাচ্চাগুলো তিরতির করে কাঁপছে। নগরীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানের পাশের এ স্বস্তির স্থানটির ভেতরে সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীর জুমলার কামানটি উদ্যানের আভিজাত্য বাড়িয়েছে।
এছাড়াও উদ্যানের ভেতরে আঁকা বাঁকা বয়ে গেছে লেক, মুক্তিযুদ্ধে ১১টি সেক্টরের বিভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংবলিত ফলক, বসার স্থান এবং ব্যায়াম করার জন্য ইস্পাতের নানা ফ্রেম যে কারো নজর কাড়বে।
এতো কিছু সত্ত্বেও এখন কেউ এখানে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে আসতে চান না। চারদিক থেকে আসছে বিভিন্ন মাদকের দুর্গন্ধ। সন্ধ্যার পরেই উদ্যানের রাস্তাজুড়ে ভাসমান যৌনকর্মীদের আনাগোনা। ছিন্নমূল, ভবঘুরে, বখাটে, মাদকসেবী ও যৌনকর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে উদ্যানটি।
কিন্তু এ বেহালদশা দেখেও কর্তৃপক্ষে নির্বিকার। যথাযথ নজরদারি আর তদারকির অভাবে নানা অপকর্ম ও অপরাধ ঘটছে এখানে। বিগত বছরগুলোতে নারী ও শিশুর লাশ এবং গ্রেনেডের মেতো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে এ উদ্যান থেকে। এসবের জন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেই দায়ী মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এমএজি ওসমানীর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তার নামে এ উদ্যানের নামকরণ করা হয়। প্রায় ২৩.৩৭ একর জমির উপর নির্মিত উদ্যানটি। তদারকির অভাবে এখানে নিরাপত্তাকর্মীরাও চলেন ইচ্ছে মতো। প্রতিদিন রাত ৯টার পর দরজাগুলো বন্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এর ফলে রাতে ছিন্নমূল মানুষ আর যৌনকর্মীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয় এ উদ্যানটি। উদ্যানে তিনটি প্রবেশমুখে ঢুকতেই নাকে ভেসে আসবে মাদক, ফেনসিডিল আর হেরোইনের উৎকট গন্ধ।
এ ব্যাপারে উদ্যানের বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সব কিছু দেখেও করার কিছুই নেই। কারণ আমাদের হাতে প্রতিরোধ করার মতো কোনো অস্ত্র নেই। আমরা তরুণ-তরুণীদের অবৈধ ও অনৈতিক কাজে বাধা দিলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও লাভ হয় না। কারণ তারা এদের থেকে নিয়মিত উপটোকন পায়।’
রাতের উদ্যানের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পরেই ভাসমান তরুণীরা প্লাস্টিকের বিছানা নিয়েই উদ্যানের বিভিন্ন গাছের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আর যারা পুরাতন তারাই তাদেরকে দেখে বুঝতে পারে। তখন বাগানের নির্জন স্থানে গিয়েই চলে তাদের অনৈতিক কাণ্ড। অনেক সময় তাদের প্রকাশ্য কাণ্ড দেখেও হতবাক হতে হয় বাগানের আগন্তুকদেরকে।’
উদ্যানের এ অবস্থা নিয়ে কথা বলতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘এটা সম্পত্তি বিভাগ অথবা নিরাপত্তা বিভাগের অধীনে রয়েছে।’
তার কথা মতো সম্পত্তি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, তারা শুধু সম্পত্তির হিসাব রাখেন। অন্য বিষয় তারা দেখেন না।
তবে নীরাপত্তাকর্মীরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।