ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় তিন দিনের অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইসরাইল। হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে প্রায় এক মাস সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার এ অস্ত্রবিরতি শুরু হয়েছে।
তবে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস এখনও এ সংক্রান্ত কোন চুক্তি করেনি। এদিকে কায়রোতে পরোক্ষ আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দকে একটি অধিক স্থায়ী অস্ত্রবিরতির ঝুঁকি নিতে হবে।
তিনি বলেন, পারস্পরিক আস্থা পুনরায় গড়ে তোলা জরুরী যা সহিংসতার পর খুবই কঠিন ব্যাপার।
গাজায় প্রায় এক মাস ধরে ইসরাইলি হামলায় এক হাজার ৮শ’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এ সময় হামাসের হামলায় ৬৭ ইসরাইলি নিহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই ইসরাইলি সৈন্য। হামলায় ইসরাইলে এক থাই নাগরিকও নিহত হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরাইলি হামলায় এক হাজার ৮শ’ ৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, এক হাজার ৩শ’র বেশি বেসামরিক নাগরিক ও ৪শ’র বেশি শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে।
৭২ ঘন্টা অস্ত্রবিরতি শুরুর পর প্রথমবারের মত প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনায় হামাসকে দায়ী করে বলেছেন, তারা বেসামরিক নাগরিকদের মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছে।
অস্ত্রবিরতি চলাকালে অনেক ফিলিস্তিনি প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদ এবং ইসরাইলি বিমান হামলার সময় ক্ষতি হওয়া বাড়িঘর পরিদর্শন করছেন।
ইসরাইলের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এর আগে অস্ত্রবিরতি সম্প্রসারণে তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিলেন।
তবে কায়রোতে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি দলের সদস্য মুসা আবু মারজুক টুইটারে লিখেছেন, অস্ত্রবিরতি বাড়ানোর কোন চুক্তি হয়নি।
কায়রোতে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি দলে হামাস, ইসলামি জিহাদ ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সদস্য রয়েছেন। তবে ইসরাইলি প্রতিনিধিদের নাম জানানো হয়নি।
ফিলিস্তিনিদের প্রধান দাবি হল, গাজার ওপর থেকে ইসরাইলি অবরোধ প্রত্যাহার ও সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেয়া। তারা তাদের ভূখণ্ড পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক তহবিলও চায়।
এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন গাজায় জাতিসংঘের স্থাপনায় ইসরাইলি হামলার সমালোচনা করে বলেন, জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো অবশ্যই নিরাপদ রাখতে হবে।
গত জুলাই মাসে দখলকৃত পশ্চিম তীরে তিন ইসরাইলি কিশোর ও জেরুজালেমে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইসরাইলি তিন কিশোরকে হত্যার জন্য হামাসকে দায়ী করা হয়। তবে হামাস এ অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে।
এর কয়েকদিন পর পূর্ব জেরুজালেমে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে অপহরণের পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন ৬ ইহুদীকে আটক করে। এরপর মূলত ইসরাইল ও হামাস পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে।
গাজা থেকে ইসরাইলে জঙ্গিদের রকেট হামলা বন্ধে তেলআবিব গত ৮ জুলাই ‘অপারেশন প্রোটেকটিভ এজ’ শুরু করে। এরপর ১৭ জুলাই গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে। প্রায় এক মাস ধরে যুদ্ধের পর মঙ্গলবার ৭২ ঘন্টার অস্ত্রবিরতি শুরু হলে ইসরাইলের স্থলবাহিনী গাজা ত্যাগ করে।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিরা সংগ্রাম শুরু করে। এর পর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।