বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “সরকার শুধু সম্প্রচার নীতিমালা নয়, দেশের সব ক্ষেত্রে সরকার অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সরকারের এসব কাজের বিরোধিতা করায় পুলিশ জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে।”
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবিতে ২০ দলীয় জোট কর্তৃক রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রথম আঘাত হানে মিডিয়ার উপর। কারণ তাদের বিপক্ষে যেন কেউ কথা বলতে না পারে। অতীতে তারা অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। সাংবাদিক ও সম্পাদকদের হয়রানি ও নির্যাতন করেছে।”
সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু কাজে বিশ্বাস করে না। তাদের কর্মকাণ্ডের কোনো সমালোচনা যেন না করা যায়, সে জন্য সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে।”
বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে যাওয়ার কঠোর সমালোচনা করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “এমন সংসদ যেখানে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই, ৫ শতাংশ মানুষও ভোট দেয়নি, এই সংসদে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত।”
তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মুখ থেকে আগে গণতন্ত্রের ফেনা বের হলেও এখন তাদের আসল চেহারা উন্মোচিত হতে শুরু করেছে। তাদের আসল চেহারা, তাদের প্রকৃত মুখোশ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তাদের নেতারা বলতে শুরু করেছেন, গণতন্ত্র থাকলে নাকি দেশের উন্নয়ন হয় না।”
ফখরুল বলেন, “এ লড়াই ২০ দলের ক্ষমতার লড়াই নয়। খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার লড়াই নয়। সাধারণ জনগণের মুক্তির লড়াই।”
এদিকে মঞ্চের ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন লেখা থাকলেও তিনি যোগ দেননি। যদিও সভাপতির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, “শারীরিক অসুস্থতার কারণে সমাবেশে উপস্থিত হতে পারেননি খালেদা জিয়া।” এ জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।”
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশ ছিল বিএনপি জোটের দ্বিতীয় কর্মসূচি। এরআগে গত শনিবার রাজধানীসহ সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল করা হয়। যদিও নির্বাচনে পর ২০ জানুয়ারি তৎকালিন ১৮ দলের সমাবেশ ডাকলেও পরে তা বিএনপির একক সমাবেশে রূপ নিয়েছিল।
রোদের মধ্যেই নির্ধারিত সময় বেলা তিনটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও শরিক দলের নেতাকর্মীরা সম্প্রচার নীতিমালা বিরোধী স্লোগান নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন। বিকেল চারটার পর বৃষ্টি হলে নেতাকর্মীরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে। কেউ কেউ উদ্যানের গাছের নীচে আশ্রয় নেন। তবে অনেককে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই নেতাদের বক্তব্য শুনতে দেখা যায়।
সমাবেশের নিরাপত্তার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ।
তিনি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক নেতাদের মুক্ত করে আনতে সবাইকে আন্দোলনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ সরকারের উদ্দেশে বলেন, “বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার বন্ধে সম্প্রচার নীতিমালা করা হচ্ছে। জানতে চাই- সাগর-রুনি হত্যা, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন যা আপনাদের দলের নেতারা করেছে এগুলো কি বিভ্রান্তিকর তথ্য? কোনোটিই বিভ্রান্তিকর নয়।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আর ৭২ সালের সংবিধান হবে না। আমরা দেশকে ৪০ বছর পিছিয়ে যেতে দেব না। সাত কোটি মানুষ তখন সহ্য করেনি, এখন ১৬ কোটি মানুষ সহ্য করবে না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, “জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগ জানে তাদের জোর করে ক্ষমতায় থাকতে হবে। তাই তারা একের পর এক নিপীড়নমূলক আইন করছে। এরা দূর্বল ও অবৈধ সরকার।”
সম্প্রচার নীতিমালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই নীতিমালার কোনো দরকার ছিল না। এখন আবার বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিতে সংবিধান সংশোধনের চিন্তা করছে। এর জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) যুক্তি দিচ্ছে জিয়াউর রহমান মার্শাল ল’র মাধ্যমে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেছিলেন তাই বাতিল করতে হবে। এটা সম্পূর্ণ দুরভিসন্ধিমূলক ও স্ব-বিরোধী।”
বিচারপতিদের অভিশংসনের পক্ষে কথা বলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সমালোচনা করেন মওদুদ।
সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, “এর মাধ্যমে মিডিয়ার পায়ে ডান্ডাবেরী পড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ আইন হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মানুষ হত্যা করবে অথচ তা বলা যাবে না।” তিনি সরকারের পতন ঘটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।