কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য কোয়ান্টাম ইনফরমেশন প্রসেসর তৈরিতে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে গুগল কর্তৃপক্ষ। সুপারকন্ডাক্টিং ইলেকট্রনিকসের ওপর ভিত্তি করে এই চিপ তৈরিতে কাজ করবেন গুগলের গবেষকেরা। এ প্রকল্পের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান্তা বারবারার পদার্থবিদ জন মার্টিনিস গুগলে যোগ দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে।
গুগল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত কোয়ান্টাম কম্পিউটার অপ্টিমাইজেশনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করবেন কোয়ান্টাম আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ল্যাবের গবেষকেরা। এই ল্যাব তৈরি হয়েছে গুগল, নাসার আমেস রিসার্চ সেন্টার ও ইউনিভার্সিটিস স্পেস রিসার্চ সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে।
গুগলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরিচালক হার্টমুট নেভেন বলেন, ‘হার্ডওয়্যার গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কোয়ান্টাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের টিমের সদস্যরা এখন নতুন ধরনের কোয়ান্টাম প্রসেসর, চিপ বা এক্ষেত্রের নতুন ধারণা বাস্তবায়ন করতে পারবেন।’
গুগল বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র তৈরিতে কাজ করছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ড টেকনোলজিসকে কিনেছে গুগল।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার
পদার্থ ও আলোর ক্ষুদ্রতম কণা হলো কোয়ান্টাম কণা। এটি একই সঙ্গে কণা ও তরঙ্গ হিসেবে থাকতে পারে এবং একই সময়ে একাধিক স্থানে অবস্থান করতে পারে। কোয়ান্টাম কণা এই রহস্যময় আচরণ করে তখনই, যখন তা বাইরের সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। যখনই বাইরের কোনো কিছুর সঙ্গে কোয়ান্টাম কণার মিথস্ক্রিয়া ঘটে, তখনই তা ওপরে বর্ণিত বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। কিন্তু কোয়ান্টাম গুণ অক্ষুণ্ন রেখেই কোয়ান্টাম কণার নিরীক্ষা, পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, তাই একটি নিয়ন্ত্রিত কোয়ান্টাম-ব্যবস্থা গড়াও সম্ভব। নিয়ন্ত্রিত কোয়ান্টাম-ব্যবস্থাকে ভিত্তিমূল ধরে সম্ভব হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি। বর্তমান ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের তুলনায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার হবে দ্রুতগতির এবং অনেক কার্যকর। গত শতকে ইলেকট্রনিক কম্পিউটার যেমন সভ্যতাকে আমূল বদলে দিয়েছিল, তেমনি কোয়ান্টাম কম্পিউটারও চলতি শতকে গতিময়তা ও কার্যকারিতার নতুন এক বিস্ময়কর মাত্রা যোগ করবে বলে গবেষকেরা ধারণা করছেন। এর আরেক বড় বৈশিষ্ট্য হলো, আরও বেশি নিখুঁত ও নির্ভুল গণনা করা।
যেভাবে কাজ করবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার
বর্তমান ইলেকট্রনিক কম্পিউটার কাজ করে বাইনারি পদ্ধতিতে। এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণভাবে সবকিছুই উপস্থাপিত, অনুধাবিত ও প্রক্রিয়াজাত হয় মাত্র দুটি বিট ০ ও ১-এর মাধ্যমে। যেহেতু মাত্র দুটি অবস্থার (হয় ০ অথবা ১) মাধ্যমেই সবকিছুই উপস্থাপিত, অনুধাবিত ও প্রক্রিয়াজাত হতে পারে, তাই ইলেকট্রনিক কম্পিউটারে গতি ও গণনাসংক্রান্ত কিছু সীমাবদ্ধতা থেকেই যায়। অন্যদিকে কোয়ান্টাম কণা যেহেতু একই সঙ্গে একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে, তাই কোয়ান্টাম-ব্যবস্থাকে ভিত্তি করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা সম্ভব হলে প্রচলিত ০ ও ১ বিটের পাশাপাশি এই দুয়ের মাঝামাঝি আরও তাত্পর্যবাহী বিট পাওয়া সম্ভব। কোয়ান্টাম-ব্যবস্থায় বিটকে বলা হয় কিউবিট এবং ০ ও ১-এর মাঝামাঝি আরও কিউবিট পাওয়া যায় কোয়ান্টম কণার ‘কোয়ান্টাম সুপারপজিশন’ বৈশিষ্ট্যের কারণে। ইলেকট্রনিক কম্পিউটারে ০ ও ১ বিট অনুধাবন করা হয় সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিন বর্তনীতে বিভবের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি নিরীক্ষা করে। অন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কিউবিট অনুধাবন করা হয় কোয়ান্টাম কণার কৌণিক ঘূর্ণন ও স্পিন নিরীক্ষা করে।
মোদ্দাকথা, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি দুয়ের বেশি কিউবিটের মাধ্যমে সম্পাদন সম্ভব হবে বলে এ ক্ষেত্রে গতি, কার্যকারিতা ও তথ্য ধারণক্ষমতাও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া যেহেতু ০ ও ১-এর পাশাপাশি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে আরও কিউবিট সম্ভব তাই এর নিরাপত্তাব্যবস্থাও হবে বর্তমান ইলেকট্রনিক কম্পিউটিংয়ের তুলনায় অনেক উন্নততর।
কবে আসবে বুদ্ধিমান কোয়ান্টাম কম্পিউটার?
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ রজার পেনরোজ মনে করেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সামর্থ্য মানবমস্তিষ্কের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। তবে এটি যে ২০৪৫ সালের মধ্যেই সম্ভব হবে এর কোনো নিশ্চয়তা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়।