শিহাব আল মামুন:
বাসায় ফেরার জন্য হাটছিলাম। ধানমন্ডি ৩২ ন্বম্বর এর ফুটপাত এর পাশে বসে ১৩ কি ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর কি যেন করছিল মাথা ঝুকে। খুব সাধারন দৃশ্য নিত্যদিন গুলোর মতই। কিন্তু হঠাৎ ইলেক্ট্রিক চার্জার বাতির ক্ষীণ আলোতে দেখি ছেলেটির পাশে একটি ষষ্ঠ শ্রেনীর ইংরেজি বই রাখা। একটু গুন গুন আওয়াজ হচ্ছে। ততোক্ষনে অনেক সামনে চলে এসেছি।
কিসের যে কৌতুহলবসত পিছে ফিরে ছেলেটির কাছে গেলাম।দেখলাম ইলেক্ট্রিক চার্জার বাতির ক্ষীণ আলোতে ছেলেটি পড়ছে।
ছেলেটির নাম মোঃ রহিদুল ইসলাম। বয়স ১৪ বছর। সে সুরভী কিন্ডার গার্ডেন স্কুল এর দ্বিতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী।ক্লাস এ সে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ছাত্র।বলতে গেলে এক পর্যায়ে পথশিশু। স্থায়ী কোন ঘরনেই। রাস্তার ফুটপাতেই তার এবং তার পরিবার এর বাস। বাবা আগে রিকশা চালাতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হবার পর থেকে বিছানায় পড়ে রয়েছেন।কোন কাজ করতে পারেন না। পরিবার পরিজন বলতে তারা ৫ ভাই ২ই বোন। ভাই-বোন সবারই বিয়ে হয়ে গেছে।তারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন। মানুষের পরিবারে বর্তমানে উপার্জনক্ষম বলতে একমাত্র ব্যক্তি তার মা।তিনি মানুষের বাসায় কাজ করে সংসারের খরচ চালান এবং ছেলে রহিদুল এর পড়াশোনার খরচ যোগান।
রহিদুলকে তার নিজের বর্তমান জীবন সম্পর্কে জানাতে বললে তিনি বলেন, তিনি মানবেতরে বর্তমানে জীবন – যাপন করছেন। কোনদিন আধবেলা-দু’বেলা খেয়ে জীবন কাটান।দিনে স্কুল এবং রাতে পড়াশুনা করেন তিনি। ভবিষ্যতের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি বড় হয়ে একজন ডাক্তার হতে চান।মা-বাবার দুঃখ- দুর্দশা ঘোচাতে চান তিনি।্তার নিজের মাসিক খরচের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন তার মাসে শুধু পড়াশুনার খরচ প্রায় ১০০০ টাকা লেগে যায়।
কথা বলতে বলতে এতক্ষন পড়ে খেয়াল করলাম যে পাশে এক রিদোয়ান এবং স্মরন নামের দুজন যুবক বসে আসেন। উনারা কে? জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন তারা পথচারি। কিছুদিন আগে তারা রাস্তা দিয়ে হেটে যাবার সময় রহিদুল এর সাথে পরিচয়।এর পর রহিদুলকে এই অবস্থায় দেখে তিনি মাঝে মাঝেই পড়াতে আসেন এবং সাধ্যমত আর্থিক সাহায্য করেন। পথচারি স্মরন বলেন, রহিদুল এক অদম্য বালক।তিনি খুবই মেধাবি ছাত্র।তার চোখে জীবনে বড় হবার এক অদম্য ইচ্ছা শক্তি রয়েছে।সঠিক সুযোগ এবং পরিচর্যা পেলে তিনিও একদিন বড় ডাক্তার হয়ে উঠতে পারেন।
আমরা জীবনে কত সুযোগ সুবিধা ভোগ করেও ক্ষান্ত নই। অথচ মানুষের জীবন কত দুর্বিষহ।কত কষ্টে তারা জীবন যাপন করে। কিন্তু এর পরেও তার শিক্ষার অদম্য আগ্রহ। তার জীবনের লক্ষ্যস্থির। কোন কিছুই যেন এ লক্ষ্য থেকে তাকে সরাতে পারবে না।তার লক্ষ্যে তিনি অটল।
আমাদেরও রহিদের মত হওয়া উচিত। উচিত, এই সব রহিদদের সঠিক সুযোগ করে দেয়া।তাদের সঠিক পরিচর্যা করা।তাহলেই দেশ হয়ে উঠবে সোনার বাংলা।যেখানে থকবেনা কোন অশিক্ষা। কোন কুসংস্কার।
রহিদকে যদি কোন স্বহৃদয়বান ব্যক্তি সাহায্য করতে চান তবে রহিদের স্কুল এ যেয়ে সরাসরি কিংবা ০১৮২০১১৬৮৭২ অথবা sunny.sis909@gmail.com এখানে যোগাযোগ করে সাহায্য করতে পারেন।