কাজ পাগল দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ বেসবল বলতে অজ্ঞান। শতকরা ষাট ভাগ মানুষ বেসবল পছন্দ করেন। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে দুই নম্বরে রয়েছে ফুটবল। হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, তায়কোয়ানদোরও কমবেশি জনপ্রিয়তা রয়েছে। এমন এক দেশে ক্রিকেট খেলাকে প্রচলিত করার মিশন নিয়ে নেমেছেন এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কিম সিউ চং নামের এই ভদ্রলোক এখন কোরিয়ান ক্রিকেট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। তার বদৌলতে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা। ১৯৯৮ সালে বিদেশীদের হাত ধরে দেশটিতে ক্রিকেট শুরু হলেও, এখন এখানে লীগ হচ্ছে নিয়মিত। ১৩ দলের লীগে কোরিয়ান ছেলেদের পাশাপাশি খেলছেন বিদেশীরা, যারা কোরিয়ান পাসপোর্ট নিয়ে দেশটিতে বসবাস করছেন। যদিও কোরিয়ান নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও ভিনদেশীদের নেয়া হয়নি জাতীয় দলে। এদের ছাড়া এশিয়ান গেমসে খেলবে দক্ষিণ কোরিয়া পুরুষ ক্রিকেট দল।
অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ডের প্রবাসীরাই দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্রিকেট খেলার প্রচলন শুরু করেন ১৯৯৮-১৯৯৯ সালের দিকে। আস্তে আস্তে এদের সঙ্গে যোগ দেয় কিছু কোরিয়ান। এদের সহায়তায় প্রবাসীদের নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় শুরু হয় ক্রিকেট লীগ। শুরুর দিকে কোরিয়ান লীগে দেশী ক্রিকেটারদের চেয়ে বিদেশী ক্রিকেটারদের সংখ্যাই ছিল বেশি। আস্তে আস্তে সেটা কমতে শুরু করেছে। এবারই প্রথম প্রবাসীদের বাদ দিয়ে শুধু কোরিয়ানদের নিয়েই জাতীয় দল তৈরি করেছে কোরিয়ান ক্রিকেট এসোসিয়েশন। দেশটিতে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপও নিচ্ছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় এশিয়ান গেমসে প্রথম বারের মতো মহিলা ও পুরুষ দুই বিভাগে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এশিয়ান গেমস সামনে ২০১২ সাল থেকে প্রস্তুতি শুরু করে কোরিয়ান ক্রিকেট দল। ১২০ জন ক্রিকেটারের মধ্য থেকে বাছাই করে তৈরী করা হয়েছে জাতীয় দল। এশিয়ান গেমসের আগে দেশ বিদেশে বেশকিছু প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে কোরিয়া।
এশিয়ান গেমসে অংশ নেয়ার পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সবার কাছে ক্রিকেটকে পরিচিত করাই টার্গেট কোরিয়ান ক্রিকেট এসোসিয়েশনের। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট কিম সিউ চং এর মতে এটা কঠিন টার্গেট হলেও বাস্তবসম্মত। ‘কোরিয়ার মানুষের ভিশন থাকে সব কিছুতে প্রথম হওয়া। যেটাতে তারা প্রথম হতে পারবে না, ওই কাজে আগ্রহও থাকে না তাদের। ক্রিকেটে শুরুতেই সফলতা আসবে না। তাই এই খেলা নিয়ে এখানকার মানুষের আগ্রহ নেই। আমার প্রথম কাজ হচ্ছে ক্রিকেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি করা।’
কোরিয়ান ক্রিকেট এসোসিয়েশনের সদস্য ইরফান গফুরের মতে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে হলে শুরুতে দরকার ক্রিকেট অবকাঠামো। এশিয়ান গেমসের জন্য একটি অস্থায়ী স্টেডিয়াম তৈরি করা হলেও এটা থাকবে কিনা তাও জানেন না তিনি। স্টেডিয়াম থাকলেও পিচের কি অবস্থা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ এশিয়ান গেমস শেষেই দায়িত্ব ছেড়ে দিবেন কিউরেটর বদরুল আলম খোকন। বাংলাদেশী এই কিউরেটর তৈরি করেছেন উইকেটগুলো। তবে এসব নিয়ে ভাবছেন না দক্ষিণ কোরিয়ান ক্রিকেট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে স্টেডিয়ামটি ক্রিকেটের জন্য নিয়ে নিবেন তিনি। ক্রিকেট একাডেমির ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করতে চান স্টেডিয়ামটি। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোরিয়াতে এসিসি’র সহযোগী দেশগুলো নিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনের চিন্তা করছে কোরিয়ান ক্রিকেট এসোসিয়েশন।