সরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর শিক্ষায় ভর্তির সুযোগ পাওয়া এখন অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে আসনের চেয়ে যোগ্য প্রার্থী অনেক বেশি থাকে, সেখানে ভর্তির সুযোগ পাওয়া অনেকটাই লটারি জেতার মতো। তার পরও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সবারই প্রথম পছন্দ। কারণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে যে আর্থিক সংগতি লাগে, তা দেশের সিংহ ভাগ অভিভাবকের নেই। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবককে হতাশ হতে হয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এসে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারা অবশ্যই মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের একটি। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে একই সঙ্গে পরীক্ষার পর মেধাতালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ থাকে। তার পরও পরীক্ষার্থীদের হতাশ হতে হয়। যোগ্যতা প্রমাণের পরও অনেক শিক্ষার্থী সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারেন না। এবারও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তীচ্ছু ২২ হাজার ৭৫৯ জন শিক্ষার্থী তাঁদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। কিন্তু সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন মাত্র তিন হাজার ৬৯৪ জন শিক্ষার্থী। বাকি ১৯ হাজার ৬৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে মাত্র ছয় হাজার ৬০৫ জন শিক্ষার্থী বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হতে পারলেও এখানে ভর্তির আর্থিক সংগতি অনেকের নেই। আবার যাঁদের সংগতি আছে, তাঁদের নিয়ে এক ধরনের বাণিজ্য এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের টোপ। অবশ্যই সেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে আর্থিক ব্যাপারটি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, মেডিক্যালে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রথম ও প্রধান পছন্দের জায়গা হবে ঢাকা। আবার অনুমোদনহীন অনেক মেডিক্যাল কলেজও এই সময় ভর্তি বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। পরে রেজিস্ট্রেশনের কথা বলে ভর্তির উদাহরণ এখানে আছে। কাজেই যোগ্যতা প্রমাণের পরও মেডিক্যালে ভর্তি হতে না-পারা প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে একটি চক্র ভর্তি বাণিজ্যে নেমে পড়তেই পারে। কারণ অনেকেরই কাছে পড়ার সুযোগ পাওয়াটাই বড় কথা। অন্যদিকে মেধা তালিকায় না থেকেও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া কিংবা পছন্দের শীর্ষে থাকা বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার টোপ দেওয়া হচ্ছে অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীকে। মেডিক্যালে ভর্তিকে কেন্দ্র করেও যে একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই।
উচ্চশিক্ষায় শুধু নয়, সব ধরনের শিক্ষার সঙ্গে এখন বাণিজ্য শব্দটি জড়িয়ে গেছে। এই অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। এর সঙ্গে অনুমোদনহীন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির নামে প্রতারণাও বন্ধ করতে হবে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।
Saimur Rahman