গত ১০ বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জিডিপি) অবদান শতকরা এক ভাগ। আর মোট মাছের উৎপাদনে অবদান ১১ ভাগ। এর সঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ প্রত্যে ও পরোভাবে যুক্ত থাকেন। বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৬০ ভাগ বাংলাদেশেই হয়। মৎস্য সেক্টরে ইলিশ ?দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিপণ্য হিসেবেও জায়গা করে নেয়। দুই বছরের ব্যবধানে ইলিশের রপ্তানির পরিমাণও দ্বিগুণ দাড়ায়। গত তিন বছরে ৫৭ উপজেলা থেকে ইলিশ উৎপাদনের বিস্তৃতি ঘটেছে ১২৫ উপজেলায়। এক সময়ে দেশের মানুষের ইলিশের চাহিদা মেটানোর জন্য রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে ব্যাপক উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় আবারও রপ্তানির সম্ভাবনা দুয়ারে কড়া নাড়ছে। প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকরি পদপে। দেশে গত কয়েক বছরে ইলিশ মাছের এই সংরণ ও উৎপাদন সফলতার পেছনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তরের অধীন নেওয়া কার্যকরী পদপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অভিযোগ রয়েছে ইলিশ উৎপাদনে ইতিবাচক উন্নয়ন হলেও এর সঙ্গে জড়িত জেলেদের জীবন যাপনে এখনো তেমন কোনো উন্নয়ন হয় নি। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে ইলিশ মাছের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টনে। চলতি অর্থ বছরে উৎপাদনের ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ মেট্রিক টন।
আর ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে তিন হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানি করে প্রায় দেড়’শ কোটি টাকা আয় হয়। এর ঠিক দুই বছরের ব্যবধানে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় দ্বিগুণ। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ?ছয় হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানি করে আয় হয় ২৯৪ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ?আয় হয় ২০১০-১১ অর্থবছরে। সাড়ে আট হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয় ৩৫৩ কোটি টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুর ঊর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান জানান, গত কয়েক বছরে মা ও জাটকা ইলিশ সংরণে ধারাবাহিকভাবে কার্যকর পদপে এবং অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলেই এতো সফলতা ধরা দিয়েছে।
দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ইলিশ মাছ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অভিজ্ঞতার আলোকে ইলিশের রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছেন এ গবেষক।
তিনি বলেন, যেহেতু উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে। সেহেতু রপ্তানির বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। তবে অবশ্যই দেশের চাহিদা পূরণের বিষয়টা প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে হাতে নেয়া জাটকা সংরণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যকরি পদপেই মূলত ইলিশের উৎপাদনে বৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে ধরে রেখেছে।
ওই প্রকল্প পরিচালক জায়েদ হাবীব বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিয়েই ইলিশের এ সফলতা ধরা দিয়েছে। মা ইলিশ ও জাটকা সংরণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মা ইলিশ সংরণে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে অভিযানের সংখ্যা ও জরিমানার পরিমাণও বেড়েছে। চলতি বছরে এক হাজার ৭৪টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে চার হাজার ৮৪৩টি অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪১ টন ইলিশ আটক করা হয়েছে। জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা।
প্রকল্প সহকারি পরিচালক মাসুদা আরা মমি জানান, মা ইলিশ সংরণ অভিযান পরিচালনা করায় দেশের নতুন নতুন অঞ্চলে ইলিশের বিস্তৃতি ঘটেছে। ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে ইলিশের বিস্তৃতি ছিল ২১ উপজেলায়। এখন ১২৫ উপজেলায় বিস্তৃতি হয়েছে।
রপ্তানির বিষয়ে এ সহকারি পরিচালক জানান, ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে, তাই আমরা চাইছি রপ্তানি হোক। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের প থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি মাসের নভেম্বরের ১ তারিখে জাটকা সংরণ অভিযান শুরু হয়েছে, চলবে ৩০ জুন পর্যুন্ত। এ সময়ে জেলেদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হবে।
তবে ইলিশের এতো ব্যাপক উন্নয়ন হলেও জেলেদের জীবন যাপনের তেমন উন্নয়ন হয়নি। প্রয়োজনের তুলনায় তারা খুবই কম সহযোগিতা পাচ্ছেন। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ‘ইলিশ জেলেদের জীবন জীবিকা : সরকারি নিরাপত্তা জাল কর্মসূচি’ শীর্ষক এক গবেষণায় এরকমই চিত্র ওঠে এসেছে।
পিপিআরসি’র ফিল্ড রিসার্চ স্পেশালিষ্ট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. জিল্লুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ইলিশের উন্নয়নে বেশি অবদান জেলেদের। কিন্তু তারা এখনো অনেকটা উপেতি রয়েছেন। বিশেষ করে ুদ্র জেলে গোষ্ঠীর লোকেরা ভালো নেই।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে।এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা খুবই জরুরি।