গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত ও নোংরামিতে পরিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো বৈঠক হয়নি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলছেন, ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যাওয়ার নজির বিএনপির নয়, বরং তা আওয়ামী লীগের।
বৃহস্পতিবারের কথিত ওই বৈঠক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, “দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্রের দরকার হয় না। তিনি রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি।”
১৯৮২ সালে আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদের ক্ষমতা দখল এবং ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক শক্তির ক্ষমতায় যাওয়ায় শেখ হাসিনার সমর্থন ছিল বলে দাবি করে তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বরাবরই আওয়ামী লীগ করে আসছে।
“দেশের জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিতে সরিয়ে দিতে এরকম ষড়যন্ত্রের কথা বলে তারা বিভ্রান্ত করে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকের বিষয়টিও তেমনি একটি।”
বৃহস্পতিবারের বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমের খবরের কোনো ভিত্তি নেই দাবি করে ফখরুল বলেন, “গুলশানের কার্যালয়ে সব সময় মিটিং হয়। প্রতিদিন দলের উপদেষ্টারা আসেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারের মিটিং নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ বেরিয়েছে, এর কোনো সত্যতা নেই।”
এনিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘রুচিহীন ও শিষ্টাচাবর্জিত’ মন্তব্য করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “উনার বক্তব্য আমরা উচ্চারণ করতেও ঘৃণাবোধ করছি।”
ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার পায়ের নিচে মাটি শক্ত। আমাদের বক্তব্য হল- যদি মাটি শক্ত হয়ে থাকে নির্বাচন দেন না কেন?”
বাংলাদেশের মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে আগাম নির্বাচন চায় দাবি করে তার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশের পর টিআইবির হিসাব চাওয়ার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী সংস্থাটিকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন বলে মনে করেন ফখরুল।
“প্রধানমন্ত্রী টিআইবির প্রতিবেদন সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রচ্ছন্নভাবে হুমকি দেওয়ার মতো। সংস্থার আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখা হবে বলে তিনি বলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চান, টিআইবি এ ধরনের প্রতিবেদন আবার করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।”
জিয়াউর রহমানের আমলে দুর্নীতির শুরু- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “এই বক্তব্য শুনে মানুষ হাসবে।
“আওয়ামী লীগ দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জনক। অতীতে আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আর এবার শেখ হাসিনা দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয়করণ করেছেন।”
বিমানবন্দরে আটক চোরাই সোনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ‘কাছের লোকজনই’ জড়িত বলে দাবি করেন ফখরুল।
৬ ডিসেম্বর এরশাদ পতন দিবস স্মরণ করে তিনি বলেন, “আজ ২৪ বছর পর নব্য স্বৈরাচার জাতির ওপর চেপে বসেছে। প্রতিনিয়ত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
গণমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেলে থাকতে হত না। কেবল তাই নয়, অনেক সাংবাদিককে খুন ও নির্যাতন করা হয়েছে। চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
“ফেইসবুকে এক লাইন লেখার জন্য একজন সেনা কর্মকর্তার বিচার চলছে। একজন ছাত্র সরকারেরর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাকে ৭ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। এ হচ্ছে দেশে বাক স্বাধীনতার নমুনা।”
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ও আসাদুল করীম শাহিন।
Post by আশিকুর রহমান স্বদেশনিউজ২৪.কম