কেউ ডাকতেন তাঁকে স্যার সম্বোধনে, কেউবা একসঙ্গে কাজ করতে এসে চাষী নজরুলের ভালোবাসার আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছিলেন। এই কেউরা আসলে আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নের তারকা। সিনেমার নক্ষত্র। চাষী নজরুলের প্রয়াণে স্বজন হারানোর কষ্টের কথা, শোকের কথা এভাবেই প্রকাশ করেছেন শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, রিয়াজ আর পূর্ণিমা।
আমার হৃদয়ে তাঁর যে ছবি আমৃত্যু তা থাকবে: শাকিব খান
আমি তাঁকে সম্মান করে স্যার ডাকতাম। তিনিও আমাকে খুব আদর করতেন। আমি এতটাই দুর্ভাগা যে তাঁকে শেষ দেখাটা দেখতে পারছি না। কারণ, এ মুহূর্তে আমি সিলেটের জাফলংয়ে চলচ্চিত্রের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত আছি। তাঁর নির্দেশনায় আমি দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। একটি সুভা ও অন্যটি দেবদাস। আমার স্বপ্নের চলচ্চিত্র ছিল দেবদাস। সেই স্বপ্নপূরণ করেছিলেন তিনি। আমার সেই স্বপ্নের মানুষটি, আমার অভিভাবক আজ চলে গেলেন। আমার জীবনের অনেক কিছুই তাঁর সঙ্গে শেয়ার করতাম। তাঁর অনেক মতামত আমার জীবনে অনেক বেশি কাজে লেগেছে। আমার প্রযোজিত প্রথম ছবি হিরো দ্য সুপারস্টার-এর মহরত ঘোষণা আমি আমার এই প্রিয় মানুষটিকে দিয়েই করেছিলাম। তাঁর সঙ্গে আর কোনো দিনই দেখা হবে না! তাঁকে না দেখার এই ব্যাপারটি আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। তবে আমার হৃদয়ে তাঁর যে ছবি আঁকা আছে তা আমৃত্যু থাকবে।
তাঁর তুলনা তিনি নিজে: অপু বিশ্বাস
তাঁর একটি মাত্র ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি আমি। এই একটি ছবি অন্য অনেক ছবির চেয়ে আলাদা। তাঁর মতো একজন বড়মাপের নির্মাতা যে আমার ওপর আস্থা রাখতে পেরেছেন এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া। নির্মাতা হিসেবে তিনি যতটা বড়মাপের ছিলেন কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। তাঁর তুলনা তিনি নিজে। যখন যা মন চাইত তাই করতেন। একবার আমরা দেবদাস ছবির শুটিং করছিলাম ঢাকার বাইরে। হঠাৎ করে তিনি বললেন কোনো শুটিং করবেন না। কীভাবে যেন জানতে পেরেছেন আমি খিচুড়ি খুব পছন্দ করি। তারপর তিনি নিজে খিচুড়ি রান্না করলেন। আমরা সবাই খেলাম। যা আমার কাছে রীতিমতো অবিশ্বাস্য ছিল। চাষী আংকেলের (চাষী নজরুল ইসলাম) সঙ্গে পরে অবশ্য আরেকটি ছবিতে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হলো না। তিনি তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি মানুষদের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
অসাধারণ মানুষ ছিলেন: রিয়াজ
চাষী ভাই এককথায় একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন। খুব ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন। দরাজ গলায় তিনি কথা বলতেন, তবে এই কথা স্নেহ আর আদরমাখা মনে হতো। তিনি এমনই একজন পরিচালক তিনি জানতেন, বুঝতেন একজন শিল্পীর কাছ থেকে কীভাবে ভালোবাসা দিয়ে কাজ আদায় করে নিতে হয়। আমার চলচ্চিত্রজীবনে যে কজন গুণী পরিচালকের নির্দেশনায় কাজ করেছি চাষী ভাই অন্যতম একজন। আমার সত্যিই ভীষণ সৌভাগ্য যে তাঁর নির্দেশনায় আমি মেঘের পরে মেঘ ও শাস্তি এই দুটি চলচ্চিত্রে কাজ করতে পেরেছি।
ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল: পূর্ণিমা
চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় তিনটি ছবিতে অভিনয়। প্রথম ছবি মেঘের পরে মেঘ। প্রথম ছবিতে কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। এরপর তো আমাদের মধ্যে খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। একেবারে পারিবারিক সম্পর্ক। আমার বিয়ের সময় অভিভাবক হিসেবে তিনি ছিলেন। আমার বাচ্চা হওয়ার খবর শুনে তিনি কোথা থেকে এসে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন। তখন অবশ্য তিনি সুস্থ ছিলেন। তাঁর চালচলন দেখে বুঝতে পারিনি তিনি ক্যানসার আক্রান্ত! প্রথম ছবি মেঘের পরে মেঘ করার পর দ্বিতীয় ছবি শাস্তি করার সময় তো আমাদের সম্পর্কটা আরও চমৎকার হয়ে যায়। বোঝাপড়ার জায়গাটা ছিল খুব পরিষ্কার। তিনটি ছবির মধ্যে শাস্তি সবচেয়ে ভালো লেগেছে। আরেকটা মজার বিষয় না বললেই নয়। মেঘের পরে মেঘ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় আমার সাদাকালো একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। মাঝখানে সিঁথি করা সেই ছবিটি তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। যখনই দেখা হতো আমি আগে ছবিটির ব্যাপারে জানতে চাইতাম।