গ্যাসের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পাইপলাইন প্রায় অকেজো হয়ে পড়ায়, আবারও রাজধানীতে বেড়েছে আবাসিক লাইনে গ্যাস সঙ্কট। সমস্যা পুরো রাজধানী জুড়ে থাকলেও পুরান ঢাকার বাসিন্দারা এই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সব’চে বেশি। এলাকাবাসীর দাবি, বার বার অভিযোগ করেও এর কোনো সমাধান দেয়নি বিতরণ কর্তৃপক্ষ। তিতাস বলছে, চাহিদা মাফিক গ্যাস না পাওয়াসহ পুরনো সরু পাইপের কারণেই এমন সমস্যা। তবে, তা সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে দাবি তাদের।
আর দশটা মায়ের মতো এই মা’ও চান তার সন্তানের মুখে সময় মতো খাবার তুলে দিতে। কিন্তু পুরান ঢাকার এই মায়ের সে চাওয়ায় যেনো বাঁধ সাধে, গ্যাসের স্বল্প চাপে নিভু-নিভু করা চুলা।
একে তো রাজধানী জুড়েই গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতি; তার ওপর মোহাম্মদপুর, গ্রিনরোড, পুরান ঢাকার গোয়ালনগর, তাঁতিবাজার, শাঁখারিবাজার এলাকায় যোগ হয়েছে ভূ-গর্ভস্থ সরু পাইপ লাইনে কম গ্যাসের প্রবাহ। ফলে, চুলার অল্প আঁচে প্রায় সময়ই থমকে যাচ্ছে গৃহস্থালীর কাজকর্ম। ফলে অনেকেই কাজ চালাচ্ছেন বিকল্প জ্বালানি দিয়ে।
এলাকাবাসীরা জানান, ৩-৪ মাস ধরে নিয়ম করে প্রতিদিনই প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা গ্যাস ছাড়াই পার করতে হয় তাদের। বারবার জানিয়েও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। তবে তিতাস বলছে, সরবরাহে ঘাটতির পাশাপাশি পুরনো পাইপ লাইনের এই দুর্ভোগ অন্য বছরের চেয়ে কম।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (অপারেশন) পরিচালক প্রকৌশলী মীর মশিউর রহমান বলেন, ‘গ্যাসের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, কারণ শীতকালে সরবরাহ চাহিদা ২৫ ভাগ বেড়ে যায়। এছাড়া পাইপ লাইন সরু হলেও কিছুটা সমস্যা হতে পারে।’
তবে গ্যাসের যেটুকু সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা এখনো সহনীয় পর্যায়ে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন- কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দূর করে কারিগরি সমীক্ষার মাধ্যমে বিতরণ সক্ষমতা যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ বিষয়ে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘মূলত জনগণের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে তারা উদাসীন, যে কারণে বিতরণ সক্ষমতা কতটুকু আছে তা ইতোপূর্বে কখনো ভেবে দেখা হয়নি। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এসব সমস্যাগুলো সামনে আসছে। এক্ষেত্রে যথাযথ কারিগরি সমীক্ষা ও স্টাডির মাধ্যমে প্রকল্প প্রস্তাব করা উচিৎ। আর সেই মোতাবেক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারলে সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।’
এছাড়া, জ্বালানি সমস্যা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে জ্বালানির সীমিত ব্যবহারে গ্রাহক-সাধারণকে আরো সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।