ভাষা বিজয়ের মাস ফেব্রুয়ারি। সারাদেশেই নয়, বাংলা ভাষীদের আবেগ-অনুভবে এখন বাঙালিত্বের গৌরবময় চেতনা। বইমেলা-প্রভাতফেরী এই নিয়ে যখন প্রাণোচ্ছল-উদ্দীপ্ত হওয়ার সময়, ঠিক তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটযোদ্ধারা বিশ্বকাপ ক্রিকেট মিশন যাত্রারম্ভের ম্যাচে মাঠে নামছেন, নামছেন অস্ট্রেলিয়ার মানুকা ওভালে, নামছেন ক্রিকেট বিশ্বাসনে মর্যাদার লড়াইয়ে। সামনে আফগানী দেওয়াল বিজয়ের উপলক্ষ। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় গড়াবে ম্যাচ। আকাশ সংস্কৃতির কৃপায় তা দেখা যাবে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে।
ক্রিকেট মাঠহীন আফগানিস্তান যেভাবে ছুটছে, সে ক্ষেত্রে তাদের ধর্তব্যে না আসার সুযোগ নেই। যদিও বাংলাদেশকে ক্রিকেটবোদ্ধারা কয়েক ধাপ এগিয়ে রেখেছেন। কিন্তু একটি অলক্ষুণে সত্যি সামনে এসে হাজির, পরিসংখ্যান। ওয়ানডে পরিসংখ্যান। সেখানে আফগানিস্তান ১০০-তে একশ’। বাংলাদেশ শূন্য। না, বীর বাঙালীদের ভরকে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। এটা ওয়ানডে পরিসংখ্যান। আর বাংলাদেশ-আফগান মুখোমুখি ম্যাচের সংখ্যা মাত্র ১টি। বাংলাদেশের মাটিতেই এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে হারিয়ে তাক লাগিয়েছিল বোমাতঙ্কে জর্জরিত আফগানরা। আবার বাংলাদেশও একশ’ তে ১০০। টোয়েন্টি২০ ভার্সানে। বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ টোয়েন্টি২০ আসরে বাংলাদশ-বাংলাদেশের মতোই জিতেছে। পাত্তাই পায়নি আফগানীরা।
শেষ বলের আগেও ক্রিকেটের রং পাল্টে যেতে পারে। কখনো কখনো ভেঙে জেতে পারে স্বপ্ন-প্রত্যাশাও। এই কথা মেনে নিয়েই বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজেদের সূচনা ম্যাচ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের কাছে হেরেছি, এবার আমাদের পালা। আমরা আগামী ম্যাচটি ভাল ক্রিকেট খেলব। এটা খেলতে পারলে জয় আমাদেরই হবে। ’
বিশ্বকাপ মিশনে এবার বাংলাদেশের স্বপ্ন-চাদরের পরিধি অনেক লম্বা নয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারাটাই বড় মানছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই পথটা যে কতটা বন্ধুর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে প্রস্তুতি ম্যাচ, সম্পন্ন হওয়া কয়েকটি ম্যাচ তাই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অন্যদিকে, আফগানকে নিয়ে আলাদা একটি ভয়ও কাজ করতে পারে। ওদের বেশ কয়জন বিশ্বমানের পেসার এবং ব্যাটার রয়েছে। পাশাপাশি সচেতনভাবে একজন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ‘এবার আফগানিস্তান চ্যাম্পিয়নও হতে পারে।’ না, এমন অবিশ্বাস্য এবং বিস্ময়কর কথায় অনেকে রোমাঞ্চিত হয়েছেন, অনেকে মুচকি হেসেছেন। তবে তৃতীয় পক্ষের অনেকেই ম্যাচটি হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামুখর, বলেছেন এমনও। অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকলেও, ক্রিকেটীয় ট্যাকটিস-টেকনিকে খুব একটা পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের চেয়ে বেশ দীর্ঘকায় আফগানীরা। ফলে অনিষ্পন্ন ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনার বারুদে আগুন থাকছেই। এখানেই সমীহ করার কথা বলেছেন মাশরাফি। এমনটা বলার চেষ্টাও করেনি বাংলাদেশ অধিনায়ক যে, এক ফুৎকারে ওরা উড়ে যাবে। বরং ফল প্রত্যাশী মাশরাফি কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে বৈতরণী পার হবেন, তা সতর্কভাবে বলার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলেই হবে।’
এটা ঠিক বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আর ক্রিকেট ঐতিহ্যের বুনোটের সঙ্গে আফগানদের অনেক ফারাক। তবে ম্যাচ জিততে হলে হার্ডি উইকেটে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে বর্ণিলতার আধিপত্যের মেলবন্ধন রচনা করতেই হবে। এখানে মাশরাফি-সাকিব-মাহমুদউল্লাহ বলে কোনো কথা নেই। সবাইকে ইস্পাতদৃঢ় মনোবল, কর্ম পরিকল্পনা-প্রচেষ্টা অনিবার্যভাবে প্রদর্শন করতে হবে। সপ্রতিভ একক নৈপুণ্যের একটুও হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। হৃদয়ানুভূতি-বুদ্ধি-বিবেচনা-অভিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সাযুজ্য নির্মাণ করতে হবে। এখানে আগে থেকেই দুর্বল প্রতিপক্ষ মনে করে নির্ভার আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপে জয়ের অভিযাত্রা নিশ্চিত করতে পরিশুদ্ধ ক্রিকেটই পূর্বশর্ত। আর বিকল্প নেই, নির্ভেজাল যাত্রারম্ভে ক্রিকেটাররা সমর্পিতপ্রাণে সবক্ষেত্রে সৃজনপ্রতিভা বহির্প্রকাশের। ফেব্রুয়ারি মাসে বাঙালীর ভাষা বিজয়ের জয়গান যখন ধ্বনিত-রণিত চারদিকে, সেই সময়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা কিন্তু মাশরাফি-সাবিক-মুশফিকরা জেগে উঠুক-সেই প্রার্থনার ডালি সাজিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।
–