আরজে সাইমুর, স্বদেশ নিউজ২৪.কম: এ প্রশ্নের সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। কোনো ডুবতে থাকা নৌকা থেকে মা ও প্রেমিকা যেকোনো একজনকে রক্ষার সুযোগ রয়েছে আপনার। আপনি কাকে বাঁচাবেন? অথবা আগুণ জ্বলতে থাকা ভবনের ভেতর থেকে মাকে বাঁচাবেন নাকি নিজের প্রেমিকাকে? এই প্রাচীন প্রশ্নটিই চীনের জাতীয় বিচারিক নিয়োগ পরীক্ষায় ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে আগামী দিনের আইনজীবী ও বিচারকদের প্রতি। যারা এ প্রশ্নের ‘সঠিক’ উত্তর দিতে পেরেছেন, তাদেরকেই চীনে আইন পেশায় যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে! এ খবর দিয়েছে বিবিসি অনলাইন।
পরীক্ষা শেষে ওই প্রশ্নটির ‘সঠিক’ উত্তরটিও জানিয়েছে চীনের বিচার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, যারা ওই পরীক্ষায় ছিলেন, তারা আইনগতভাবে তাদের মাকে বাঁচাতে আইনগতভাবে বাধ্য। সন্তান হিসেবে নিজের ওপর অর্পিত আইনগত দায়িত্বের উর্ধ্বে রোমান্টিক প্রেমকে স্থান দিলে, তা ‘অসক্রিয় থাকার অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
কিন্তু চীনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা মন্ত্রণালয়ের এমন ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। একজন ব্যবহারকারী অভিযোগ করে বলেছেন, কারো পিতামাতাকে সমর্থন দেয়ার বাধ্যবাধকতার সঙ্গে জরুরী অবস্থায় অন্য কাউকে উদ্ধারের তুলনা করাটা হাস্যকর। আরেকজন ব্যাখ্যার সুরে লিখেছেন, আইন অনুসারে একজন সন্তানের অবশ্যই তার মাকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু আইনে তো এটা লেখা নেই যে, অন্য মানুষও যখন বিপদে থাকবে, তখনও মাকেই বাঁচাতে হবে সন্তানের।
তবে এ প্রশ্নের জবাবে বেশিরভাগ চীনার কাছে মায়ের ভালোবাসাই জিতে গেছে। এক তরুণ লিখেছেন, মেয়েদের পাওয়া যাবে সবখানে। কিন্তু আমার মা একজনই। আরেকজন লিখেছেন, “আমি অবশ্যই আমার মাকে বাঁচাতাম আগে। আইনী কারণ ছাড়াও, আমার মা কিন্তু আমাকে বড় করেছেন। দ্বিতীয়ত, আমার প্রেমিকা আমার মায়ের চেয়ে কম বয়সী। তাই তার নিজেকে রক্ষা করার সামর্থ্য আমার বয়স্কা মায়ের চেয়ে বেশি।” আমরা অবশ্য এ ব্যাক্তির গার্লফ্রেন্ডের প্রতিক্রিয়া জানার সুযোগ পাইনি!
মজার বিষয় হলো, এ প্রশ্নের যে এক ধরণের যৌনবৈষম্যগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তা চীনা ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর কেউই ধরতে পারেননি। যদি প্রশ্ন করা হয়, একজন নারীর কাকে বাঁচানো উচিৎ? তার পিতাকে নাকি বয়ফ্রেন্ডকে? এখন কিন্তু প্রশ্নের তাৎপর্য পরিবর্তিত হয়ে গেল। চীনের আগামী দিনের আইনজীবী বা বিচারকদের হয়তো এ প্রশ্নটির উত্তরই আগামী বছর লিখতে হবে।