একের পর এক অঘটন সত্ত্বেও সরকারে অস্বস্তি নেই বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। চলমান পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই বিদেশী নাগরিক ও পুলিশের এক এএসআইকে হত্যা, হোসেনি দালানে ইমামবাড়ায় বোমা হামলা এবং আজিজ সুপার মার্কেট ও লালমাটিয়ার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতেই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। নেতারা দাবি করছেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সতর্ক অবস্থায় আছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, সরকার বিব্রত না হলেও এ ধরনের ঘটনা কারও জন্যই সুখকর নয়। এমনকি স্বাধীন মুক্তচিন্তার জন্যও এসব ঘটনা হুমকি ও ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, যারা হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে তাদের কিছু রাজনৈতিক দর্শন রয়েছে। রাজনৈতিক কারণ ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটেনা। এক্ষেত্রে ধর্মান্ধতা ও মতান্ধতা কাজ করছে। আর সত্যি কথা বলতে কি, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদ দেশ থেকে এত সহজে নির্মূল হয়ে যাবে সেটা ব্যক্তিগতভাবে আমি অন্তত মনে করি না। গত কয়েকদিনের প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে লেনিন বলেন, আমরা আগেই বলে আসছি দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশী বিদেশী নানা শক্তি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদকে মদদ জোগাচ্ছে। দেশের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে যখন চিহ্নিত দুই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর করার সময় হয়েছে তখনই এই অপশক্তি এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে, এসব দমন করার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে সে আশঙ্কা আমাদের ছিল। বিশেষ করে যখন দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর করার সময় হয়েছে তখনই তাদের অনুসারীরা মরিয়া হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। এ কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা চায় না সেই জামায়াত-শিবির বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আর জঙ্গি হিসেবে যেসব নাম আসছে তারাও জামায়াত-শিবিরেরই অংশ। বেছে বেছে একের পর এক হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ বা সরকার অস্বস্তিতে পড়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা বলেন, স্বস্তি আর অস্বস্তির বিষয় নয়। বিভিন্ন অপশক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য তাদের পশ্চিমা প্রভুদের মদদে ছোটখাটো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছে। কিন্তু সরকার এসব বাধা অতিক্রম করেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করবে। একের পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগ বা সরকারে অস্বস্তি আছে কিনা এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, অস্বস্তি যেভাবে বলা যায় ঠিক এরকম অস্বস্তি আওয়ামী লীগ বা সরকারে নেই। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। অস্বস্তি কথাটা এই প্রেক্ষিতে বলা যায়। তিনি বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান যেটা বলেছে এগুলো আসলে আবেগের কথা। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমাদের (আওয়ামী লীগ ও সরকার) আরও সতর্ক থাকতে হবে। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু একের পর এক হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করে বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না ও রায় কার্যকর দেখতে চায় না, তারাই মূলত প্রগতিশীল ও মুক্তমনা মানুষদের হত্যা করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাই এখন বাস্তবায়ন করছে তারা। দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় যখন কার্যকরের সময় এসেছে তখনই তারা এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, এসব ঘটনা সবার হৃদয় নাড়া দিয়েছে। সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন ব্যর্থতা এখনও দেখছি না। কারণ, ইতিমধ্যে পূর্বের বেশ কিছু ঘটনার ক্লু তারা উদ্ধার করেছে। ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। আশা করি প্রকাশক হত্যা রহস্যও উদ্ধার হবে। আসামিরাও গ্রেপ্তার হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, ডিফেন্সিভ নয়, তাদের আরও অফেন্সিভ হতে হবে।