আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। রাতে প্রেসিডেন্ট এ সিদ্ধান্ত জানানোর পর তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাতেই সম্পন্ন হয়েছে ফাঁসি কার্যকরের সব ধাপ। দুই দণ্ডপ্রাপ্তের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেন পরিবারের সদস্যরা। রায় কার্যকর করাকে ঘিরে দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিভাগীয় শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরে মোতায়েন করা হয় বিজিবি। ফাঁসি কার্যকরের পর মুজাহিদ ও সালাউদ্দিনের মরদেহ নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব আয়োজন সম্পন্ন হয় রাতেই। গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় দোষ স্বীকার করে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জন প্রাণ ভিক্ষার জন্য আবেদন করেছেন। যদিও দুইজনের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় এ ধরনের আবেদন করার বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারেন এমনটিও মনে করেন না তারা। এদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের যে খবর প্রচার হয়েছে তা অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। মুজাহিদ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে পরিবারকে জানিয়েছিলেন। রায় কার্যকরকে ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই মানুষের চোখ ছিল কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে। সকালে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। তারা বিকাল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। দুপুরেই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত দুইজনই প্রেসিডেন্টের কাছে দণ্ড মওকুফের আবেদন করেছেন। এরপর থেকেই শুরু হয় ভিন্ন আলোচনা। দুই নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয় আদৌ তারা প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছেন কিনা। তারা বলেন, এ বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এলেও আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয় হয়ে আবেদন বঙ্গভবনে পৌঁছে রাতে। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত জানানোর পর ফাঁসি কার্যকরের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এদিকে গতকাল দিনভর সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা সাক্ষাতের জন্য কয়েক দফা কারা ফটকে যান। তবে সাক্ষাতের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি মিলেনি। একটি আবেদন নিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে যান। কিন্তু তারাও সেখানে আবেদন দেয়ার সুযোগ পাননি। রাতে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত আসার পর কারা কর্তৃপক্ষ দুই নেতার পরিবারের সদস্যদের শেষ সাক্ষাতের জন্য কারাগারে যেতে বলেন। খবর পেয়ে রাত নয়টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা কারাগারে যান সাক্ষাৎ করতে। প্রথমে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, দুই ছেলে, মেয়েসহ পরিবারের ১৫ জন সদস্য সেখানে ছিলেন। পরে স্ত্রী-সন্তানসহ মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা কারাগারে যান। শেষ সাক্ষাতের পর সম্পন্ন হয় ফাঁসি কার্যকরের বাকি আনুষ্ঠানিকতা।
এদিকে দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম আল ফেসানি। তিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য একটি পত্র কারাগারে জমা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, কারাগার কর্তৃপক্ষ তার ওই আবেদনে কোন সাড়া প্রদান করেননি। তিনি সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তিনি জানান, দুইদিন আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করেছেন। ওই সাক্ষাতে তিনি জানিয়েছিলেন, পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে করণীয় ঠিক করবেন। ৫টা ১০ মিনিটে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফাইয়াজ ও জাফর খান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সকাল বেলায় আমার ছোটভাই হুম্মাম প্রেসিডেন্টের কাছে একটি চিঠি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওই চিঠি গ্রহণ করেনি। আমাদেরকে জানিয়েছে যে, ওই চিঠি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছে আসতে হবে। এরপর তার ভাই সেখান থেকে ফিরে আসেন। তিনি আরও জানান, দুপুর থেকে মিডিয়ার মারফতে আমরা জানতে পেরেছি যে, বাবা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন। এটি আমরা অবগত নই। এটি সরকারের পক্ষ থেকে প্রপাগান্ডা। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে জানান যে, আমার বাবা প্রাণ ভিক্ষার লোক নন। তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন। এর ১৫ মিনিট পর সেখানে যান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরী। তারা তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য জেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চান। কিন্তু, কোন সাড়া না পেয়ে গাড়িতে করে আবার চলে যান। বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে মুজাহিদের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন। তিনি মুজাহিদের সঙ্গে আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি চান। কিন্তু, কোন সাড়া না পেয়ে তিনি সেখান থেকে চলে যান।
চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা: রায় কার্যকর উপলক্ষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কারাগারের সামনে র্যাব ও পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় দেখতে পাওয়া গেছে। কারাগারের সামনে পুলিশের দুইটি রায়ট কারও ছিল। নাজিমউদ্দিন রোডের মাথায় চানখাঁরপুলে এবং বেচারাম দেউড়ির গলিতে পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় লালবাগ চৌরাস্তা মোড়, বংশাল সড়ক, চানখাঁরপুল মোড় ও নাজিমউদ্দিন রোডে রিকশা ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে অত্যধিক যানজট থাকার কারণে মাঝে-মধ্যে ওই রাস্তা খোলা হয়েছে। তবে পরে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও কারাগার সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন মোড়ে সন্দেহভাজন পথচারীদের তল্লাশি করতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মফিজ উদ্দীন আহমেদ জানান, বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ বাড়তি নিরাপত্তা নিয়েছে। দণ্ড কার্যকরের আগে এবং পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে বলে তিনি জানান।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেন, তার কৃত অপরাধের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া না হলে ন্যায়বিচার হবে না। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। দাখিলকৃত সাতটি অভিযোগের মধ্যে মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১লা অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
মুজাহিদের পরিবার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে-অ্যাটর্নি জেনারেল
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পরিবার জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিযোগ করেন তিনি। মাহবুবে আলম বলেন, কারও বিরুদ্ধে যদি ৫টি মামলাও থাকে এবং একটিতে যদি তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়, তাহলে অন্য মামলাগুলো এমনিতেই অকার্যকর হয়ে যাবে। কারণ মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালত কোন সাক্ষ্যগ্রহণ করে না এবং রায়ও দেবেন না। এর আগে দুপুরে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না-ই-জাহান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের বলেন, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মুজাহিদের অবস্থান কি হবে তা তিনি (মুজাহিদ) জানতে চান। একই সঙ্গে তিনি (মুজাহিদ) আশা প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট নাগরিক হিসেবে তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। মুজাহিদের স্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মুজাহিদের পরিবার এসব বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ অন্যান্য মামলায় তার আর কোন দায় থাকবে না। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের দরকার নেই। প্রাণভিক্ষার এ আবেদন তিনি নিজেই করতে পারেন। প্রেসিডেন্টের কাছে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি চিঠি দিতে পারে না উল্লেখ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট একটি সাংবিধানিক পদ। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করতে পারেন না।
আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শ তুলে ধরলেন গয়েশ্বর
ত্রুটিপূর্ণ বিচার ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে একটি পিটিশন দিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের সহকর্মী এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আজ মৃত্যুর সম্মুখীন। ইতিমধ্যে আমাদের দল এই ট্রায়ালের ব্যাপারে অবস্থান প্রকাশ করেছে। আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার পরিবারের কাছে প্রকাশ করেছেন, যেন তার পক্ষ হয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে একটি পিটিশন জমা দেয়া হয়। সেই পিটিশনের কপি জমা দেয়ার পর আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে। আজ আমরা এই পিটিশনের ভিত্তি আপনাদের কাছে প্রকাশ করতে চাই। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আইসিটি’র অধীনে এই মামলার প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের কড়া নজর ছিল। তারা সরকারের এই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করাকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু পৃথিবী এখন দেখছে যে, কিভাবে কোর্ট তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে এবং নিজ স্বার্থের অপব্যবহার করেছে। গয়েশ্বর রায় বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এই ট্রায়ালের সমালোচনা না করে, তার পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছেন যেন তারা আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে। আপনারা ভাল মতো জানেন, আন্তর্জাতিক মহল এই ট্রায়ালের তীব্র নিন্দা এবং সমালোচনা করছে। এটা প্রচণ্ড দুঃখের বিষয় যে, আন্তর্জাতিক মহল তার ন্যায়বিচারের জন্য কতটা তৎপরতার সঙ্গে সুপ্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তিনি হয়ত সেটা না জেনেই মৃত্যুর মুখোমুখি হবেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এই বিচারের পদ্ধতিগত স্বচ্ছতা এবং পক্ষপাতিত্বের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর জন ম্যাককেইন ‘ইউএস সেক্রেটারি অব স্টেট’কে একটি চিঠি লিখেছেন। এবং এর সঙ্গে একমত হয়েছে বিখ্যাত জন এফ কেনেডি পরিবারের সদস্য কেরি কেনেডি। এই ট্রায়াল উভয় হাউজ অব কংগ্রেসেরও গভীর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে হাউজ অব লডর্সের সম্মানীয় সদস্য লর্ড কারলাইল বারবার সাবধান বাণী দিয়ে বলেছেন, যদি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অবিচার সংশোধনের প্রতি সুষ্ঠু পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাজ্যের এমপি টম ব্রার্ক বলেছেন, এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, শুরু থেকেই আইসিটি’র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ন্যায় বিচার প্রদান করার উদ্দেশ্য ছিল না। এটি এক অন্যায় অবিচার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং বাংলাদেশের প্রতি। গয়েশ্বর রায় বলেন, যুক্তরাজ্যের ‘বার হিউম্যান রাইটস কমিটি’ এই ট্রায়ালের অস্বচ্ছতা এবং অন্যায্যতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা, যত দ্রুত সম্ভব সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত করে আইসিটির প্রতি একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছে। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ও তাদের সঙ্গে একমত হয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত করার দাবি করেছে। দ্য সেন্টার ফর জাস্টিস অ্যান্ড একাউন্টিবিলিটি প্রকাশ করেছে যে, ‘জাস্টিস হ্যাজ বিন ডিনাইড’। এমনকি আল জাজিরা ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাক্ষীদের উপর অবাধ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রিপোর্ট করেছে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেছেন, তিনি যেন এটিকে মিস ট্রায়াল হিসেবে ঘোষণা দেন। যেন তার অ্যালিবি সাক্ষীর (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এমন সাক্ষী) ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে কোর্টে যেন তাদের সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। তিনি এটাও অনুরোধ করেছেন যেন, তার প্রামাণিক দলিল গ্রহণ করা হয় এবং স্বচ্ছভাবে সত্যতা যাচাই করা হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রেসিডেন্টকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান যে, তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের অভিভাবক। প্রত্যেক বাংলাদেশী নাগরিকের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব তার হাতে। আইনের রক্ষক হিসেবে তিনি অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে, এখানে ন্যক্কারজনকভাবে আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতি এই অবিচার প্রতিকার করার জন্য প্রেসিডেন্ট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দীর্ঘ তিন দশকের আইন প্রণয়নে সহকর্মী হিসেবে তারা এক সঙ্গে কাজ করেছেন বিধায় তার সততা এবং নিষ্ঠার প্রতি তার বিশ্বাস আছে। এই ব্যাপারে তিনি মুখ ফিরিয়ে নেবেন না এবং সুষ্ঠু বিচারের প্রতি সঠিক পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি আশা করেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিশ্বাস করেন প্রেসিডেন্ট একজন আইনের রক্ষক হিসেবে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশী মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করবেন। যেসব আন্তর্জাতিক চুক্তি এই মুহূর্তে উপেক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আগে যখন রাষ্ট্রদূত স্টিফেন র্যাপ অনেক কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করে পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন এই ট্রায়ালে আন্তর্জাতিক বিচারের সামঞ্জস্যতা রেখে এগোনো হয়। এই সব উপদেশ থেকে তারা শুধু তাদের স্বার্থপোযোগী অংশগুলো অপব্যবহার করেছে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রদূত স্টিফেন র্যাপ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ট্রায়াল নিয়ে একটি কড়া বিবৃতি দিয়েছেন। এছাড়া ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ রাজিভ ধাওয়ান বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশে সমপ্রতি একটি লেখা প্রকাশ করেছেন। সেটা আমরা উল্লেখ করতে চাই- ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টকে আমরা বলছি- ন্যায় বিচার প্রদান করুন। বিবাদী পক্ষের সাক্ষীদের কথা বলতে দিন। বাংলাদেশের মানুষকে আমরা ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে আহ্বান জানাচ্ছি। ঘৃণা দিয়ে যে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয় তাতে আদালতের ন্যায়বিচারও সংক্রমিত হতে পারে। এতে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং সুশাসনই অধঃপতিত হয়’। গয়েশ্বর রায় বলেন, আমাদের জরুরি বক্তব্য হচ্ছে- আন্তর্জাতিক মহল থেকে যখন এই ত্রুটিপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তার জবাবে প্রশ্নকারীকে সরকার বিরোধী বলা হয় বা বলা হয় তারা আর্থিক স্বার্থে এটা করছে। যাদের মনে এই প্রশ্ন আসে তাদের কাছে আমরা জানতে চাই যে, রাষ্ট্রদূত স্টিফেন র্যাপ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, নিউ ইয়র্ক টাইমস, লর্ড কারলাইল, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট, ইউকে বার হিউম্যান রাইটস কমিটি, সিস্টার অব জন এফ কেনেডি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর জন ম্যাককেইন, আল জাজিরা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ড. রাজিভ ধাওয়ান, ইউএস ফরেন অ্যাফায়ার্স কনগ্রেসিনাল কমিটি, ইউএস সিনেট হিউম্যান রাইটস কমিশন, ফিজিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূতের মতো ব্যক্তি বা সংস্থাকে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করা সম্ভব কি? এক প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর রায় বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও প্রাণভিক্ষা চাওয়া হবে না। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ইচ্ছানুযায়ী, এ বিচার নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের পর্যবেক্ষণ প্রেসিডেন্টের কাছে তার পরিবার তুলে ধরবেন। এ ব্যাপারে বিকালেই প্রেসিডেন্টের কাছে একটি পিটিশন দেয়া হবে।
প্রেসিডেন্টকে পিটিশন দেবো: সালাউদ্দিনের পরিবার
সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, ত্রুটিপূর্ণ বিচারের বিষয়ে আমরা আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি দেবে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বঙ্গভবনে যাবো চিঠি দিতে। উনি (সালাউদ্দিন কাদের) আমাকে বলেছেন যে, দীর্ঘ ৩০ বছর প্রেসিডেন্ট এমপি ছিলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও এমপি ছিলেন। আমরা আশা করি, বিষয়টি দেখে প্রেসিডেন্ট একটা পদক্ষেপ নেবেন। তিনি বলেন, ‘মিস ট্রায়ালের’ বিষয়ে বিভিন্ন ‘পেপারস’ প্রেসিডেন্টের নজরে আনবো। প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে সালাউদ্দিন কাদেরের সিদ্ধান্ত কী- জানতে চাইলে তার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। এটা উনার ব্যাপার। আমরা যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছি, তখন তিনি বলেছেন, আইনজীবীর কাছে বলবো। ফারহাত কাদের বলেন, আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। এটা আমাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি, বিএনপি আমাদের পাশে আছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে তার আইনজীবীদের দেখা করতে না দেয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা। প্রাণভিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, সকালে আইনজীবীরা কারাগারে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। আমার ছেলেদেরও সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হয়নি। এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের বলেন, মার্সি পিটিশনের ব্যাপারে আমরা একটা কথা তুলে ধরতে চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আইনজীবীকে কাছে না বলেন, উনার সিদ্ধান্ত কি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বলতে পারছি না, বাবার সিদ্ধান্ত কি। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট দুজন এখন আমার বাবার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছ থেকে আমরা কি তথ্যটা পাবো। ওটা কি সঠিক উত্তর কি না, তাও আমরা বলতে পারছি না। সে কারণে আমরা বারবার বলছি, উনার সঙ্গে আইনজীবীদের দেখা করা অতি জরুরি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সালাউদ্দিন কাদেরের বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গভবনে গিয়ে বিফল
এদিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিচারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে অভিযোগ জানিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে পিটিশন দিতে গিয়ে বিফল হয়ে ফিরেছে তার পরিবার। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিঠি নিয়ে বঙ্গভবনে যান ফারহাত কাদের ও হুম্মাম কাদের। বঙ্গভবনের ফটকের সামনে গাড়িতে বসে ছিলেন সালাউদ্দিন কাদেরের স্ত্রী। ‘পিটিশন টু দ্য অনারেবল প্রেসিডেন্ট ফ্রম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী’ শিরোনামের চিঠিটি নিয়ে হুম্মাম কাদের ভেতরে গেলে গেলে মূল ফটকের রিসিপশনে তাকে বসানো হয়। বঙ্গভবনের ডেসপাস শাখার কর্মকর্তারা তাকে জানান, প্রেসিডেন্টের কাছে সরাসরি কোন আবেদন করা যায় না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দিতে হবে। এরপর হুম্মাম কাদের রিসিপশন থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের চিঠি নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দিতে বলা হয়েছে। এদিকে আইনি লড়াই শেষ হওয়ার পর এখন শুধু দোষ স্বীকার করে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে বলে সালাউদ্দিন কাদের ক্ষমা চেয়েছেন বলে দুপুরে সাংবাদিকদের জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ক্ষমা চেয়েছেন কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাবা ক্ষমা চেয়ে মার্সি পিটিশন চাইবেন? এটা আমি তার সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে পারবো না। এক প্রশ্নের জবাবে হুম্মাম কাদের বলেন, আনিসুল হক ভাল করেই জানেন, বাবা কি বলতে পারেন। আমার বাবা কি ধরনের লোক, তা সবাই জানেন।
মুজাহিদের প্রাণভিক্ষা চাওয়ার খবর সত্য নয়: জামায়াত
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের কাছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য বলে দাবি করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে কারা অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে প্রচারিত আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদনের খবরটি সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। তিনি বলেন, মুজাহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রেসিডেন্টের প্রাণভিক্ষার বিষয়ে পরামর্শের জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তিনি পরিবারের কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কোন বক্তব্য দেননি। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে জানানো হয়েছে যে, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ আইনজীবীদের সঙ্গে পরবর্তী আইনি বিষয়ে পরামর্শ করতে চান। সে মোতাবেক আইনজীবীরা মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ মুজাহিদের ইচ্ছা অনুযায়ী গতরাত ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আইনজীবীদেরকে সাক্ষাতের অনুমতি দেননি। ডা. শফিক বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্ষমা চাওয়ার যে খবর প্রচারিত হয়েছে তা সঠিক নয়। আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে মুজাহিদের সঙ্গে আইনজীবীদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। সেই সঙ্গে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মুক্তির দাবিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল সমাবেশ করেছে দলটির নেতাকর্মী সমর্থকরা। এ উপলক্ষে বাড্ডায় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির ঢাকা মহানগর সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন বলেন, সরকার আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে জামায়াতের শীর্ষনেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যার মাধ্যমে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। কিন্তু সচেতন জনতা সরকারের সে ষড়যন্ত্র কখনোই মেনে নেবে না। তিনি সরকারকে হত্যার রাজনীতি পরিহার করার দাবি জানান। সমাবেশে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ড. রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ঢাকা মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য ড. হেলাল উদ্দীনের নেতৃত্বে সকালে রাজধানীর শান্তিনগরে বিক্ষোভ করে জামায়াত। মিছিলটি শান্তিনগর চৌরাস্তা থেকে শুরু হয়ে মালিবাগে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। একই দাবিতে মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে মিরপুরে বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াত। মিছিলটি গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সকাল পৌনে ৯টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ-জুরাইন রোড বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত। মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য আবু আবদুল্লাহ, মো. আজমল হোসেন ও এএম আবদুল্লাহর নেতৃত্বে পুরান ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত। মিছিলটি নয়াবাজার থেকে শুরু হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির সেক্রেটারি মো. মারুফ উপস্থিত ছিলেন। সকাল ৯টায় দলের মজলিসে শূরা সদস্য মো. আল আমীনের নেতৃত্বে খিলগাঁওয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলে শিবির ঢাকা মহানগর পূর্বের সেক্রেটারি সিয়াম রেজাসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা মহানগর মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা মুহিবুল্লাহ ও মাওলানা মেজবাহউল্লাহর নেতৃত্বে রাজধানীর উত্তরায় বিক্ষোভ মিছিল হয়।
প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়ে যুদ্ধাপরাধীদের
ক্ষমা পাবার সুযোগ নেই: গণজাগরণ মঞ্চ
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা পাবার কোন সুযোগ নেই। এই বিচারে তো দুইটি পক্ষ। একপক্ষ যুদ্ধাপরাধীরা এবং অপরপক্ষ বাংলাদেশের জনগণ। প্রেসিডেন্ট নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে কিংবা বিপরীতে গিয়ে তো নিশ্চয়ই তিনি তাদের ক্ষমা করতে পারেন না। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি না আমাদের প্রেসিডেন্ট যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি এই অপরাধীদেরকে ক্ষমা করবেন।
গতকাল বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের টানা অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
শুক্রবার থেকে টানা এই কর্মসূচি চলছে। এসময় ডা. ইমরান আরও বলেন, তারা প্রাণভিক্ষার যে আবেদন করেছে তাতে আমরা সাধুবাদ জানাই। কেননা, প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার আগে তাদেরকে সকল অপরাধ স্বীকার করতে হয়েছে। আদালতের নামে তারা যে ‘বিষোদগার’ করেছিলেন সেটা ক্ষমা চাইবার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেল। তিনি বলেন, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার মধ্য দিয়ে তারা এতো মানুষকে হত্যা করার যেসব অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে সেগুলো স্বীকার করে নিলেন। তারা এতোদিন পর অন্তত বুঝতে পারলেন, তারা অপরাধ করেছিলেন এবং তারা অনুতপ্ত হলো যে, এটা তাদের অপরাধ ছিলো।
বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীর বিষয়ে বিএনপির বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, তারা যেসব বক্তব্য দিয়েছে এর মধ্য দিয়ে আদতে তারা এতদিন যেটা দাবি করে এসেছে তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের দল তাদের দলেও মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে সেটা প্রমাণ হয় না। একদিকে তারা তাদের দলের ভেতরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছে অন্যদিকে তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যিনি একজন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা তাকেও অপমান করছে। আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোন মানুষের এখন বিএনপি করার সুযোগ বিএনপির বর্তমান নীতিনির্ধারকরা রাখেনি। রিভিউ খারিজ হওয়ার পর সকল প্রকার আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে উল্লেখ করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, এ অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আইনগত আর কোন বাধা নেই।
২১শে আগস্ট মামলায় নিজের অবস্থান জানতে চান মুজাহিদ
২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে সংঘটিত গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামি হিসেবে নিজের অবস্থান কি হবে তা জানতে চান ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে মুজাহিদের পরিবারের পক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি জানান তার পরিবারের সদস্যরা। লিখিত বক্তব্যে মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না-ই-জাহান বলেন, ১৯শে নভেম্বর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুজাহিদ জানিয়েছিলেন, তিনি লিখিতভাবে প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চাইবেন যে, ২১শে আগস্ট হত্যা মামলায় তার অবস্থান কি হবে? মুজাহিদের স্ত্রী বলেন, এর আগে এই মামলার অভিযোগপত্রে মুজাহিদের নাম ছিল না। সম্পূরক চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার কারণে জাতির সামনে একজন হত্যাকারী হিসেবে তার নাম এসেছে। সে কারণেই তিনি আইনি লড়াই করে সেই দায় থেকে মুক্তি পেতে চান। কেননা, এ পর্যন্ত আদালতে হাজির হওয়া কোন সাক্ষী এই ঘটনার সঙ্গে তাকে জড়িয়ে কোন বক্তব্য রাখেন নি। তিনি আরও বলেন, আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর প্রশাসন ২১শে আগস্ট মামলায় তাকে উপস্থিত করা থেকে বিরত রাখতে পারতেন। কিন্তু আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার পরও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদকে হাজির করা হয়েছে। ১৬ই জুন আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার পরে মুজাহিদের জন্য অন্য কোন মামলার শাস্তি বা বিচারের প্রয়োজন ছিল না। তামান্না-ই-জাহান আরও বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় যদি অন্য কোন মামলায় তার দণ্ড কার্যকর করা হয় তাহলে সেটা হবে তার (মুজাহিদ) নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। আমাদের আইনজীবীরা দক্ষতার সঙ্গে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। অ্যাটর্নি জেনারেলও স্বীকার করেছেন যে, মুজাহিদের সঙ্গে সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ নেই। এমতাবস্থায় তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তার ওপর জুলুম করা হয়েছে।
তিনি (মুজাহিদ) আশা করেন প্রেসিডেন্ট নাগরিক হিসেবে তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেন, তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে জানিয়েছেন তিনি নির্দোষ, নির্দোষ, নির্দোষ। মার্সি পিটিশন তিনি করবেন কি-না সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তিনি যে বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন সে বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু আইনজীবীরা এখন পর্যন্ত সাক্ষাৎ করতে না পারার কারণে আমাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে আদৌ তাকে আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাবেন কি-না? মাবরুর আরও বলেন, তার (মুজাহিদ) বিরুদ্ধে সরাসরি কোন হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ না থাকার পরও মৃত্যুদণ্ডের মতো ‘ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট’ আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদের ভাই আলী আজগর মো. আসলাম, ছেলে আলী আহমেদ তাহকিক, স্ত্রীর বোন সাকিয়া তাসনীম, আইনজীবী সাইফুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।