সারা দেশে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসের বিভীষিকা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এ অভিযোগ করেন। সরকার সমর্থকদের হামলা চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া এবং কুয়াকাটায় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী গণসংযোগে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এতে প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড তুলাতুলিতে বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুকের গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর ভাতিজার নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে বিএনপি প্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে সরকার সমর্থকরা। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপির প্রার্থীকে ভোট না দেয়ার হুমকি দিচ্ছে তারা। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রচারণাকালে মাইক ভেঙে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। কুমিল্লার চান্দিনায় বিএনপি’র নির্বাচনী মিটিংয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সাভার পৌরসভায় বিএনপি মেয়র প্রার্থী বদিউজ্জামান বদির বাড়িতে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা তিন রাউন্ড গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। সেখানে সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদেরকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। সিরাজগঞ্জে বিএনপি’র প্রার্থী গণসংযোগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর এবং ৭ নেতাকর্মী ও সমর্থককে আহত করেছে। সরকার দলের এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে রিজভী আহমেদ বলেন, শরীয়তপুরের ডামুড্যায় স্থানীয় এমপি নাইম রাজ্জাক নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন মিটিং ও নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। টাঙ্গাইলের মধুপুরে স্থানীয় এমপি হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটারদের ডেকে এনে নির্বাচনী আলোচনা সভা করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী পারভেজের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তিনি আরও বলেন, পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রংপুরে ৫৮, যশোরে ৪৪, মেহেরপুরে ২১, লালমনিরহাটে ৪২, সাতক্ষীরায় ৩০ এবং গাইবান্ধায় ৩০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিজভী আহমেদ বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ল্যাবরেটরিতে উৎপন্ন সন্ত্রাস শব্দটি স্বমহিমায় বিরাজমান। তারা নিজেদের পৌষ মাস টিকিয়ে রাখতে গণতন্ত্রের সর্বনাশ ঘটিয়েছে। এদের লাগামহীন সন্ত্রাস ও সহিংসতার জোরে দেশের সকল পর্যায়ের নির্বাচনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায়। এখানে জনমতের কোন তোয়াক্কা করার দরকার হয় না। আগামী পৌর নির্বাচন গায়ের জোরে নিজেদের দখলে রাখতে তারা সন্ত্রাসের ঘোড়ায় চেপে বসেছে। তিনি বলেন, শাসকদলের এমপি, মন্ত্রী, নেতাকর্মীরা সাধারণ ভোটারদেরকে মানুষ বলে গণ্য করছে না। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িকসহ সংঘাত-সন্ত্রাসের বিভীষিকা নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে- নির্বাচনের দিন শাসকদলের মনের মতো নির্বাচন হবে, ভোটারদের নয়। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা অবস্থা সামলানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহায়তা চাওয়া কমিশনের আত্মবিলুপ্তির আরেকটি নিদর্শন। এটি যেন হরিণের নিরাপত্তার জন্য বাঘের কাছে সহায়তা চাওয়া। নির্বাচন কমিশনের এসব নতজানু কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়, কমিশনের মেরুদণ্ড মানবীয় শক্ত হাড় দ্বারা নয় বরং পাটকাঠি দ্বারা নির্মিত। এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রাজশাহীর তানোর পৌর বিএনপি’র সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ সরকারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।