চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক কমান্ডারের আস্তানার সন্ধান পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।। থানার এক নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলি ওয়ার্ডের আমানবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ওই আস্তানা থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া জেএমবির তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
আটকরা হলেন- নয়ন, রাসেল ও ফয়সাল। এদের বয়স ২৪ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে।
গোপন সূত্রে জেএমবির বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার ফারদিন ওরফে পিয়াসের আস্তানার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আমানবাজারের জয়নব কমিউনিটি সেন্টারের পেছনে অবস্থান নেয় নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম। টিমের সদস্যরা শুরুতেই হাজি ইছহাক ম্যানশন নামের একটি দোতলা বাড়ি তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে। এরপর বাড়ির নিচতলায় ফারদিনের ভাড়া নেয়া বাসায় অভিযান চালায়।
সেখানে একটি এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল, ১৯০ রাউন্ড গুলি, দুই কেজি জেল এক্সপ্লোসিভ, ১০টি ডেটোনেটর, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি পোশাক, নেমপ্লেট ও বেইজ র্যাংক এবং সাংগঠনিক বিভিন্ন নথিপত্র পাওয়া যায়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বাবুল আক্তার বলেন, আমরা এর আগে খোয়াজনগর থেকে পাঁচ জেএমবি সদস্যকে আটক করেছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদে তারা সামরিক কমান্ডারের আস্তানা সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়েছিল। এরপর আমি অনুসন্ধানে নামি এবং আরও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করি। আস্তানার সঠিক স্থান নিশ্চিত হওয়ার পর রাত ১২টায় অভিযান শুরু করি। ভোর চারটায় অভিযান শেষ হয়েছে।
বাবুল আক্তার জানান, তিনদিক থেকে বাড়ি ঘিরে ফেলে অনেক অনুরোধের পরও ভেতর থেকে কেউ গেট খুলে দেয়নি। পরে দেয়াল টপকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন সদস্য কমান্ডো স্টাইলে ভেতরে ঢুকে যান। তারা দ্রুত গেট খুলে দেওয়ার পর অন্য সদস্যরাও ভেতরে ঢুকে অবস্থান নেয়। এরপর ফারদিনের বাসার দরজা খোলা নিয়ে শুরু হয় বিপত্তি। বারবার দরজা ধাক্কানোর পরও ভেতর থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে তারা বাসার ভেতরে ঢোকেন। সেখানে রাসেলকে পাওয়া যায়।
তিনি বলেন ‘নয়ন এবং ফয়সালকে আমরা শহর থেকে আটক করেছি। রাসেলকে আস্তানায় পাওয়া গেছে। নয়ন ও ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেই মূলত আস্তানার সঠিক সন্ধান আমরা পাই।’
এদিকে অভিযানের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে হাটহাজারী থানা পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়।
দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, জেএমবির সামরিক কমাণ্ডারের আস্তানা থেকে আমেরিকার তৈরি একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশে অতীতে কোনোদিন এ ধরনের অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। দেখা যাচ্ছে জেএমবি বিস্ফোরকের পাশাপাশি ভারি অস্ত্রও মজুদ করছে।
বাবুল আক্তার বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য ছিল তা হচ্ছে ফারদিনের আস্তানা থেকে মূলত আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। আর কিছুদিন সময় পেলে তারা বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে সক্ষম হতো। এ অভিযানের মধ্য দিয়ে জেএমবির চট্টগ্রামে বড় ধরনের সহিংসতার পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেওয়া গেলো।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, যে পরিমাণ বিস্ফোরক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে তা দিয়ে বিপুল পরিমাণ ককটেল-বোমা বানানো যেত। এসব বিস্ফোরক দিয়ে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে পারত জঙ্গিরা।
আটকের পর ভোর ৫টার দিকে জেএমবি সদস্যদের ওই বাসা থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।। তবে বাড়িটি ঘিরে এখনও অবস্থান করছে হাটহাজারী থানা পুলিশের টিম।