ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রেক্ষিতে সতর্ক সংকেত বাড়ানোর ফলে চার জেলার উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
একই সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।
শুক্রবার (২০ মে) বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭, কক্সবাজারে ৬ এবং মংলা নমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলে।
দুর্যোগ সচিব বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন কাজ শুরু করেছে।
এছাড়া কক্সবাবাজার উপকূলের লোকজনদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সতর্কতা বাড়লে তাদের যে কোনো সময় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে।
উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে নিতে স্থানীয় দুর্যোগ কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে নির্দেশ না দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর জেলা ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মধ্যে আসবে বলে জানানো হয়।
কক্সবাজার ও আশেপাশের এলাকায় ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত ছাড়াও এর আশেপাশের ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চল পড়বে।
রোয়ানুর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও আশেপাশের দ্বীফ ও চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস আসতে পারে।
এছাড়া অতিক্রমকালে কক্সাবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীল সমুদ্রে অবস্থানরত সকল মাছ ধরা নৌকা ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ঘর্ণিঝড়, ক্রমেই উপকূলে এগিয়ে আসছে। আগের দিন দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে থাকলেও এখন হাজার কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে।
সর্বশেষ বেলা ১২টা নাগাদ ঘুর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৬৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৪৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিম, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৭৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিম ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮১০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
সতর্কতা সংকেত ২ থেকে ৪ এবং সর্বশেষ ৭, ৬ ও ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
৭ নম্বর বিপদ সংকেতের অর্থ বন্দরে ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত।
ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৬ নম্বরের অর্থ, বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আর ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের অর্থ, বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতি।
ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।